ঝালকাঠি সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের বাদলকাঠি গ্রামে কুনিহারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৫টি পরিবারের ২৫০ জনের মতো মানুষের বসবাস। মাথা গোঁজার জায়গা পেয়ে খুশি হলেও তারা রয়েছেন বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে। দিন দিন বাড়ছে তাদের ভোগান্তি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঝালকাঠিতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন নিম্নআয়ের এসব পরিবারকে দেয়া হয় ঘর। শুরুটা ভালো হলেও তাদের কষ্টের শেষ নেই।
প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পরিবারের জন্য দুই শতাংশ খাস জমিতে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নয়টি ব্যারাকের সামনে একটি করে শ্যালো টিউবওয়েল থাকলেও নেই গভীর নলকূপ।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের চাবি দেয়া হয় ৪৫ পরিবারকে। তারা দ্রুতই স্বপ্নের ঘরে বসবাস শুরু করে। কিন্তু পাঁচ মাস কেটে গেলেও তারা পায়নি বৈদ্যুতিক সংযোগ।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিদ্যুতের খুঁটি ও সংযোগের ব্যবস্থা হয়নি। কাঠফাটা গরমে এখানকার মানুষের কষ্ট সীমাহীন। হাতপাখা আর কুপির আলো তাদের ভরসা।
সন্ধ্যায় এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। ঘরে ঘরে শিশুদের পড়তে হয় কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে।
এখানকার ৪ নম্বর ব্যারাকের ১৯ নম্বর ঘরের বাসিন্দা রাশিদা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ইটের ভাটায় কাজ করে। আগে থাকতাম মানসের বাড়ি। এহন থাকি নিজের বাড়ি। কিন্তু পানি আর কারেন কোনোডাই মোগো নাই। গরমের চোডে রাইতে মাইয়া পোলা লইয়া মাডে বইয়া থাহি।’
১ নম্বর ব্যারাকের ৩ নম্বর ঘরে থাকেন রনি বেগম।
তিনি বলেন, ‘বাদলকাডি ইসকুল দিয়া খাওয়ার পানি আনি হেতে মোগো অনেক কষ্ট অয়। মাঝে মাঝে মোরা খালের পানি ফিককিরি (ফিটকিরি) দিয়া খাই।’
৮ নম্বর ব্যারাকের ৪০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি দে বলেন, ‘আমি পানি আনি উত্তর দিকের মাঝি বাড়ি থেকে। কিন্তু তারা সবসময় পানি আনা পছন্দ করে না। তাই মাঝে মাঝে গাজীবাড়ি থেকেও খাবার পানি আনি।’
চা দোকানি মাহমুদা বেগম বলেন, ‘নয়ডা ব্যারাকে ৪৫ ঘরে পোলাপান লইয়া প্রায় আড়াই শ মানুষ থাহে। সবাই অন্যের বাড়ি পানি আনতে যায়। আর হেই বাড়িওয়ালা মন্দও কয়।’
নয় ব্যারাকের সামনে থাকা নয়টি শ্যালো টিউবওয়েলের চারটিই নষ্ট। অন্যগুলো থেকেও পানি ওঠে কম। এখানকার ১৮টি টয়লেটের ছয়টির দরজা নেই।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবেকুন্নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তারা জায়গা পরিদর্শন করে জানিয়েছে, কুনিহাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে তাদের সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ হবে। এই টাকা পেলে তারা কাজ শুরু করবে।’
ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাদেক জামান বলেন, ‘আমি এখনও কোনো চিঠি পাইনি। এটা যেহেতু আশ্রয়ণ প্রকল্প, সেহেতু প্রকল্প থেকেই অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বরাদ্দের অর্থ ও অর্ডার পেলে আমরা দ্রুত কুনিহাড়ি আশ্রয়নে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু করব।’
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের নিজস্ব তহবিল থেকে এখানে লাইন দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। এখানে যাতে তাড়াতাড়ি কাজ হয় সে জন্য আমি প্রকল্পের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। দ্রুতই কাজ হবে বলে আশা করা যায়।’