সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় নতুন ৯টি গ্রামে সাত দিনের লকডাউন করা হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে ওই গ্রামগুলোতে লকডাউন বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রশাসন। এই লকডাউন চলবে আগামী ১২ জুন পর্যন্ত।
গত কয়েক দিনে জেলায় বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আক্রান্তদের অধিকাংশের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়।
লকডাউন কার্যকর বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ জানান, শনিবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত এক জরুরি সভায় করোনার সংক্রমণ বাড়ায় নতুন করে দামুড়হুদা উপজেলার আরও চারটি গ্রাম লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে আরও পাঁচটি গ্রাম লকডাউনের জন্য সুপারিশ করেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর।
গ্রামগুলো হলো কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর, চাকুলিয়া, ফুলবাড়ি ও পারকৃষ্ণপুর, মদনা ইউনিয়নের ঝাঝাডাঙ্গা, নাস্তিপুর, কামারপাড়া, বাড়াদী, ছোট বলদিয়া ও বড় বলদিয়া গ্রাম।
এ নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলায় ১৬টি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে ২ জুন কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাত গ্রাম ও নাটুদহ ইউনিয়নের দুটি এলাকা লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন।
সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে গ্রামগুলোতে গিয়ে লকডাউন কার্যকর করছি। লকডাউনের সময় যেসব বিধিনিষেধ মানতে হবে, তা একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। আগামী সাত দিন লকডাউন করা গ্রামগুলোতে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বাকি সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকানিদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ দেয়া হবে। করোনায় আক্রান্ত যারা বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন, তাদের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী উপহার পাঠানো হবে।’
সাত দিনের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার না কমলে লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারবে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার রাতে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের নজির আলী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় তার মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে তারই বড় ভাই জমির মহলদার করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কে এলাকাবাসী।
এ ছাড়া শনিবার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন ও জাহাজপোতা গ্রামের নুরুল ইসলাম করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। পরে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দামুড়হুদা উপজেলায় বর্তমানে ৯৭ জন করোনা আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৬২ জন নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত দামুড়হুদা উপজেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় চারজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৬২। নতুন আক্রান্ত চারজনের বাড়ি জীবননগর উপজেলায়।
বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬৯। নতুন করে মারা গেছেন একজন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১-এ।