করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে স্থগিত করা হয়েছিল প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। ২১ জুন ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে বরগুনার ২৯টি ইউনিয়নে মেলেনি নির্বাচনি আমেজ।
নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের যেমন আগ্রহ নেই, প্রার্থীরাও যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, স্থগিত হওয়ার পর তাদের ভোট নিয়ে তেমন উৎসাহ নেই। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসবেন।
আর প্রার্থীদের অবস্থা কোনোমতে ভোট হলেই বেঁচে যান। কারণ ভোট স্থগিত হওয়ার আগে প্রচারে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। নতুন করে আর খরচ করার সামর্থ্য নেই।
করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ১ এপ্রিল ৩৭১ ইউপি, ১১ পৌরসভাসহ লক্ষ্মীপুর-২ আসনে নির্বাচন স্থগিত করে। ২ জুন নতুন করে আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ঘোষণা করে।
দিনভর প্রচারের পাশাপাশি রাতেও চলে সভা
প্রথম পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনে বরগুনা জেলায় ২৯ ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। মনোনয়নপত্র জমা দেন ১ হাজার ৬১২ জন।
এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলার নয় ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪২, আমতলীর ছয় ইউনিয়নে ৫১, বেতাগীর সাত ইউনিয়নে ২৮, পাথরঘাটার তিন ইউনিয়নে ২৭, বামনার চার ইউনিয়নে ২১ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩৪৬ এবং সাধারণ সদস্যপদে ১০৭৯ জন প্রার্থী হন।
তফসিল অনুযায়ী, বরগুনায় ভোটের তারিখ ছিল ১১ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীরা নেমে পড়েন আটঘাট বেঁধে। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে চলে বাহারি প্রচার, মাইকিং, উঠান বৈঠক ও পথসভা।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সহিংসতায় আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। মামলা হয় অর্ধশতাধিক।
এমন পরিস্থিতিতে করোনার কারণে ১ এপ্রিল ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এরপরই রণে ভঙ্গ হয় প্রচারে, ঝিমিয়ে পড়েন প্রার্থী সমর্থক ও ভোটাররা। প্রার্থীরা বলছেন, ভোট স্থগিতে নির্বাচনি আমেজে ছেদ পড়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস শরীফ স্বপন জানান, নির্বাচনে একটা গতি ছিল। ভোটারদেরও সাড়া ছিল। কিন্তু ফের তারিখ ঘোষণার পর আর সেই আমেজ নেই।
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের পোস্টার, ব্যানার, লিফলেটগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে সেগুলো করতে আবার খরচ বাড়বে। এখন কেবল ভোট গ্রহণের দিনের অপেক্ষায় আছি।’
একই বক্তব্য সদরের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু জাফরের। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে মাঠ গুছিয়েছিলাম, কিন্তু সব এলোমেলো হয়েছে। নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন ভোটাররা।
পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী গোলাম নাসির বলেন, ‘নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পরও আমি মাঠ ছাড়িনি। ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। তাদের খোঁজখবর করেছি। নতুন করে তারিখ ঘোষণায় আবারও পুরোদমে প্রচার শুরু করব।’
বেতগী সদর ইউনিয়নের ভোটার আবদুল হক বলেন, ‘ইলিকশনডা মোগে দারে একটা উস্টুমের নাহান (উৎসবের মতো)। ভোট অইবোনা হুইন্না মনডা এক্কেরে কেমন জানি হইয়া গ্যাছে। এহন আবার ইলিকশনের তারিখ দেছে সরকার। কিন্তু আগেন নাহান আর মজা পাইতেছি না।’
জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বলেন, ‘তারিখ ঘোষণা হলেও নতুন দিকনির্দেশনা আসেনি। প্রচারের ধরন কী হবে, প্রার্থীদের করণীয় কী, এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা সে অনুসারে কাজ শুরু করব।’
ইয়াসেও চুপ ছিলেন প্রার্থীরা
সম্প্রতি ভারতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনায় ভালোই ক্ষয়ক্ষতি হয়। জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা ভোটারদের পাশে থাকার কথা বললেও দুর্যোগের সময় বরগুনাবাসী তাদের পাশে পাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ভোটার।
দেড় হাজারের বেশি প্রার্থীর মধ্যে গুটি কয়েকজনকে দুর্যোগকবলিত মানুষদের পাশে দেখা গেছে। তাদের একটি বড় অংশই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় বড় বড় কথা বললেও নতুন প্রার্থীদের অনেকেই খরচের ভয়ে ইয়াসের সময় চুপ ছিলেন। তারা মানুষের পাশে ছিলেন না। খোঁজও নেননি।