বৃষ্টি নামলেই বেহাল হয়ে পড়ে নেত্রকোণার বাংলাবাজার-শিমুলজানি সড়কটি। মেঘের অবস্থা দেখে এই সড়ক ধরে চলাচল করে গ্রামবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এই রাস্তার সাড়ে তিন কিলোমিটারই কাঁচা। সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানে খানাখন্দগুলোতে পানি জমে যায়। কাদায় পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় লোকজন হাঁটতেও পারে না, কোনো যানবাহনও চলতে পারে না নির্বিঘ্নে।
সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের এই রাস্তাটি বছরের পর বছর বেহাল। বাংলাবাজার এলাকা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি গ্রামের পাশ দিয়ে শিমুলজানিতে গিয়ে শেষ হয়েছে রাস্তাটি। প্রায় ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এত বছর ধরে এই দুর্ভোগ, এর সমাধান করেনি প্রশাসন। বিভিন্ন সময় নিজ উদ্যোগে তারা সাময়িকভাবে রাস্তা মেরামত করে, যা টেকসই নয়। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই সড়কটির উন্নয়নকাজ শুরু করা হবে।
সড়কের পাশে সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন দোকানে পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ করেন। এ কারণে প্রতিদিনই তাকে এই সড়ক ব্যবহার করতে হয়।
ছবি: সংগৃহীত
খায়রুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক বছর দইরাই রাস্তাডা খারাপ অইছে। একটু বৃষ্টি অইলেই আর যাওন যায় না। হাইট্যাই যাওন যায় না। রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল কেমনে চলব? খুব খারাপের মদ্যে আছি।’
মোবারকপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আহমেদ আলী বলেন, ‘বয়স অইছে। বৃষ্টির দিনে অহন আর এই রাস্তাডা দিয়া চলতে সাহস পাই না। পেক (কাদা) আর পেক। পা ধইরা রাহন যায় না। রাইত বিরাইতে কেউর অসুকবিসুক অইলে হাসপাতালে লইয়া যাওনডা কঠিন। রাস্তাডার লাইগ্যা যে কী অসুবিদায় আছি, কইয়া শেষ করন যাইব না।’
ছবি: সংগৃহীত
ধীতপুর গ্রামের লালচান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাস্তাডার লাইগ্যা কেউ আগায়া আহে না। আমরা নিজেরাই এলাকার মানুষ মিল্যা রাস্তায় মাটি কাইট্যা দিছি, বালু ফালাইছি। পানি জইম্যা তাহে দেইখ্যা রাস্তায় জাগায় জাগায় নালা কাইট্যা দিছি। শুকনায় কোনোমতে চলন যায়। এত কিছু কইরাও রাস্তাডায় চলনের ব্যবস্থা করতাম পারতাছি না। সরকারেও দ্যাহে না। আমরা আর কী করাম?’
নেত্রকোণা সদরে এলজিইডির সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তার প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারই কাঁচা। বৃষ্টির দিনে এই সড়কে চলতে গেলে বিপাকে পড়ে যায় প্রায় ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: নিউজবাংলা
এলজিইডির নেত্রকোণা সদর উপজেলা প্রকৌশলী লুৎফর রহমান বলেন, ‘এলাকার সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা প্রথম ধাপে বাংলাবাজার থেকে শুরু করে পাকা অংশ যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে আরও এক কিলোমিটার পাকা করার প্রাক্কলন হিসাব তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে একটু দেরি হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই মাসেই অনুমোদন হওয়ার পরপরই টেন্ডার আহ্বান করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার সংস্কারের জন্য এক কোটি টাকার হিসাব ধরা হয়েছে। রাস্তা পাকা করার পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিরক্ষা দেয়ালও দেয়া হবে রাস্তাটিতে। সেভাবেই প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। ধাপে ধাপে দ্রুতই পুরো রাস্তাটি পাকা করা হবে।’