ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের চর আলগী ইউনিয়নে খালের ওপর নির্মিত তিনটি সেতু একে একে ভেঙে পড়ায় চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। তাদের অভিযোগ, অনিয়ম, নিম্নমানের কাজ এবং পাইলিং ছাড়া সেতুগুলো নির্মাণ করে টাকা হরিলুট করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অপরিকল্পিত খননের অভিযোগ এনে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড দোষারোপ করছে ঠিকাদারকে।
স্থানীয়রা জানান, সাত বছর আগে নির্মিত সেতুতে গত ২৮ মে দুপুরের দিকে ফাটল দেখা দেয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে সেতুটি। এর আগে ২৫ মে রাতে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ভেঙে পড়ে। এর এক দিন পর পাঁচ বছর আগে নির্মিত সেতুটিও ভেঙে যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব টেকির চরের খালের ওপর ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৬-১৭ অর্থবছরে, চর আলগী বুরাখালী খালের ওপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৭-১৮ অর্থবছরর ও চর মছলন্দ গ্রামের খালে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৩-১৪ অর্থবছরে তৈরি করা হয়।
নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অপরিকল্পিত খননের কারণেই সেতুগুলো ভেঙে পড়েছে। গফরগাঁও ও হোসেনপুর উপজেলার মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। তিনটি সেতু ধসে পড়ায় বোরাখালী, নয়াপাড়া, কুরতলীপাড়া, জিরাতিপাড়া, টেকিরচর, নিধিয়ারচরসহ কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বগা মারার চর, হাজিপুর, চরকাটাইল, মহেশকুড়াসহ আশপাশের ১০-১২টি গ্রামের লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সেতু নির্মাণের নামে টাকা হরিলুট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বোরাখালী গ্রামের আলতাফ মিয়া দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘যাদের ট্যাহা আছে তাদের আরও ট্যাহা লাগে। সরকারের ট্যাহা পহেডে (পকেটে) ভইরা কম খরচে এই সেতুগুলো বানাইছে। যারা এমন কাজ কইরা আমরারে দুর্ভোগে ফালছে তাদের বিচার হওয়ার দরকার।’
চর আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘আমাদের ধারণা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত খননের কারণেই সেতুগুলো ভেঙে পড়েছে। তিনটি সেতুই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে করা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ভেঙে পড়া সেতুগুলো পরিদর্শন করেছেন। এমন ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয় কি না কিংবা এ সেতুগুলো পুনরায় দরপত্রের মাধ্যমে নির্মাণ হবে কি না, তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন।’
সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়ে ঠিকাদার মাহমুদ হাসান সজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কেন সেতু ভেঙে পড়েছে, সেটা তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। টেন্ডারে চাহিদা মোতাবেক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে আমার কোনো গাফিলতি নেই।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সেতুগুলো নির্মাণের আগে বোরাখালী খালটি মরা ছিল, তেমন পানি ছিল না। দরপত্র অনুযায়ী পাঁচ ফুট গভীরে বেসমেন্ট করে সেতু নির্মাণ করেন ঠিকাদার। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সেতুর কাছে ৮-১০ ফুট গভীর করে খনন করায় মাটি সরে বেসমেন্টে ফাটল ধরে সেতু ভেঙে পড়ে।
গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ‘গ্রামীণ রাস্তায় কমবেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় সেতুগুলো নির্মিত হয়েছিল। সেতু ভেঙে পড়ার অস্বাভাবিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু ভাঙার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়ী। কারণ পাইলিং না করে সেতু তৈরি করায় ভেঙে পড়েছে। আমরা নিয়ম মেনে পরিকল্পনামাফিক খনন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমাদের গাফিলতিতে সেতু ভেঙেছে এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। নির্মাণ ত্রুটির কারণেই ভেঙে গেছে সেতুগুলো।’