দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ৬১ বছর পরেও হ্রদের নাব্যতা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে হ্রদের তলায় মাটি ভরাট ও হ্রদের গভীরতা কমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল।
যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন রাঙামাটির ছয় উপজেলার দুই লাখের বেশি মানুষ।
রাঙামাটি শহরের সঙ্গে বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, নানিয়ারচর উপজেলার যোগাযোগ হয় নৌপথে। কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এই নৌপথগুলোতে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বড় কোনো নৌযান চলতে পারছে না। ছোট নৌযানগুলো চরে আটকে যাচ্ছে। দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। বেড়েছে স্পিডবোটের চাহিদা। তবে এ জন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ, উপজেলাগুলোতে বেড়েছে পণ্যের দাম।
তবে কাপ্তাই হ্রদ খননে সরকার উদ্যোগ নিলে পরিবহনব্যবস্থা জনবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন খাত ও মৎস্যসম্পদের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছে জেলার বিভিন্ন পেশাজীবী।
রাঙ্গামাটি শহরের দিনমজুর মালেক মিয়া জানান, রাঙামাটি লঞ্চঘাটে তিনি কাজ করেন। লঞ্চ চলাকালীন প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতেন তিনি। এখন ২০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না মালেক মিয়া।
এদিকে রাঙামাটি সদর থেকে লংগদু উপজেলার মারিচ্যাগামী স্পিডবোটচালক হোসাইনুল করিম বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে লংগদু উপজেলার মারিচ্যা, মাইনীসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় স্পিডবোট চালাই। কাপ্তাইয়ের পানি কমায় এখন যাওয়ার পথে ডুবোচর ওঠায় স্পিডবোট আটকে যায়। ফলে এখন অতিরিক্ত সময় লাগে এবং যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
রাঙ্গামাটি লঞ্চ নৌযান সমিতির সভাপতি মো. নুরুল হক বলেন, ‘প্রায় দুই মাস ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। কাপ্তাই হ্রদে লঞ্চ চলে ৫০০, কান্ট্রিবোট চলে পাঁচ হাজার। হ্রদে পলি জমার কারণে প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে দুই-চার মাস লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। এতে উপজেলাগুলোতে যাতায়াত যেমন কষ্টকর হয়ে পড়ছে, তেমনি সেখানে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দামও।’
কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদ তৈরির ৬১ বছর পরেও এখন পর্যন্ত খননের উদ্যোগ নেয়নি সরকার। হ্রদের ওপর নির্ভর করে শহরের সঙ্গে কয়েকটি উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা। সরকার যদি কাপ্তাই হ্রদ খননে উদ্যোগ নিত, তাহলে উপজেলাগুলোর মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেত।’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদ খননের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে জানানো হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হ্রদ খননের বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।’