মাত্র দুদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজাম উদ্দিন নামের এক তরুণের পরিচয় হয় বিদেশি এক নারীর সঙ্গে। ওই নারী দাবি করেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, বেশ ভালো একটা চাকরিও করেন সেখানে।
এই পরিচয়েই নিজাম উদ্দিনের জন্য সেই নারী বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেন ২৫ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২১ কোটি টাকার সমান।
তবে গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এটি আসলে একটি ফাঁদ।
ফোন করে জানানো হয়, এই টাকা তুলতে হলে জমা দিতে হবে ৮৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু প্রতারণা বুঝতে পেয়ে ২১ কোটি টাকার প্রলোভন সংবরণ করলেন নিজাম।
যেভাবে শুরু গল্পের
কীভাবে কী করলেন নিজাম, পুরো ঘটনাটা জেনে নেয়া যাক নিজামের মুখেই।
নিজাম বলেন, ‘গত দুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে বিদেশি এক নারী নক করেন। বলেন, হাই নিজাম! দেখি আমার বিস্তারিত সে জানে! কিন্তু আমার বিস্তারিত সে জানে কীভাবে?
‘সে বলল, আমি তো তোমাকে অনেক দিন থেকে জানি, তুমি আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে ই-মেইলে নক করো।’
নিজাম এরপর সেই নারীকে মেইল করে জিজ্ঞেস করেন, তাকে তিনি কীভাবে চেনেন। আর তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও জানতে চান।
সেই নারী জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ভালো একটা চাকরি করেন। নিজামকে তার পছন্দ হয়েছে। তার সবকিছু তার ভালো লাগছে।
তখন নিজাম আবার জানতে চান, তাকে কীভাবে চেনেন।
জবাব এল, সেই নারী বেশ কিছুদিন ধরে সব সামাজিকমাধ্যমে তাকে ফলো করেন।
একপর্যায়ে তিনি বলেন, তাকে কিছু টাকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠাবেন।
কারণ জিজ্ঞেস করায় আবার জবাব এল, ‘তোমাকে আমার ভালো লাগছে, আমি অবসরে গেলে বাংলাদেশে গিয়ে তোমার সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে চাই।’
এ ধরনের কথাবার্তা বলে প্রতারণার খবর প্রায়ই আসে গণমাধ্যমে। নিজামও বুঝতে পারেন, তার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে প্রতারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি তার কথাবার্তায় বুঝলাম যে এটা প্রতারক চক্র। তখন আমিও তার সঙ্গে অভিনয় করতে থাকলাম। মেসেজ, চ্যাটিং করতে থাকলাম।
‘গত রোববার সে আমার জন্য ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বক্স পাঠায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১ কোটি টাকা। আমি সেটা গ্রহণ করি নাই। সে পাঠানোর পর আমাকে নক করে বলে যে, নিজাম, আমি তো টাকাটা পাঠিয়ে দিয়েছি, তুমি এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নাও। সেখানে আমার একজন এজেন্ট আছে, তার কাছ থেকে রিসিভ করে নাও।’
পরের দিন সেই উপহার গ্রহণ করার কথা সেই নারীকে বলেন নিজাম। আর কথিত সেই এজেন্টের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। তাকেও বলেন টাকাটা পাঠিয়ে দেয়া হবে।
কথিত এজেন্টকে নিয়ে খেলা
নিজাম টাকা দেবেন শুনে সেই কথিত এজেন্ট বারবার যোগাযোগ করতে থাকেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি ফোন দেন। বলেন, ‘আপনার পার্সেলটি এসেছে, ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের, আপনি কি সেটা রিসিভ করতে চান? রিসিভ করতে চাইলে ৮৫০ ডলার আমাদের পেমেন্ট করতে হবে।’
খেলতে থাকেন নিজাম।
বলেন, ‘তো কীভাবে পেমেন্ট করব?’
সেই কথিত এজেন্ট বলেন ব্যাংকে দিতে।
তখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং মোবাইল নম্বর আমাকে মেসেজ করতে বলেন। আর সেই কথিত এজেন্ট সবকিছু তাকে পাঠান।
নিজাম বলেন, ‘আমি তো শুরু থেকে বুঝতে পেরেছিলাম ওরা প্রতারক চক্র।’
এর মধ্যে তিনি চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীনকেও বিষয়টি জানান।
ওসি মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই তরুণ প্রতারণার শিকার হচ্ছিলেন। বিষয়টি তিনি আমাকে জানান। এরপর তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ কন্টিনিউ করি। সম্ভবত ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এক প্রতারক তাকে ফোন করে গিফট নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু ওই তরুণ প্রতারকের কথামতো ডলার পাঠাননি। তাই তিনি প্রতারণা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।’
ওসি বলেন, ‘যেহেতু প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি, মানে ক্রাইম হয়নি, তাই কোনো মামলা হয়নি। তবে আমরা প্রতারকদের ধরতে চেষ্টা করছি।’
সচেতনতার জন্য ওই তরুণের সঙ্গে ভিডিও করে ফেসবুকে দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওসি।