বরিশালের গৌরনদীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজের ৯ দিন পর একটি ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নাজনীন আক্তার নামের এক তরুণীর মরদেহ।
গৌরনদীর বাটাজোর এলাকায় ধানক্ষেত থেকে বুধবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে তাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তার স্বামী সাকিব হাওলাদার।
সাকিব বগুড়া সেনানিবাসের ঝাড়ুদার। তার পরিবার গৌরনদীর বাটাজোর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে।
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নাজনীনের বাড়ি বগুড়া সদরের সাবগ্রামে। তিনি গাবতলীর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ের জেরে সাকিব হোসেনের সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে তার বিয়ে হয়।
সাকিবের বাড়ি গৌরনদীর বাটাজোর এলাকাতেই।
নাজনীনের ভাই আব্দুল আহাদ জানান, গত ২৪ মে বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে বাটাজোরে নিজ বাসায় নিয়ে যান সাকিব। সেদিনই নাজনীনকে হত্যা করে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে রাখেন সাকিব।
নাজনীনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন সাকিব
আহাদ বলেন, স্বামীর দরিদ্র অবস্থা নিয়ে নাজনীনের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল। এর জেরেই তাকে হত্যা করেছে সাকিব। এরপর দুই দিন ধরে বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। পরদিনই বগুড়া থেকে সাকিবকে আটক করা হয়।
ওসি আফজাল বলেন, ‘আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বগুড়ার পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন সাকিব। তবে মরদেহ কোথায় রেখেছেন তা পরিষ্কার করে বলেননি। এরপর তাকে নিয়ে বগুড়ার পুলিশ গৌরনদীতে আসে। মরদেহ খুঁজতে অভিযান চালানো হয় সেখানে। মরদেহ সেখানে না পেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলায় সাকিবের গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়।
‘পরে নাজনীনের ভাইয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আবার সাকিবের ভাড়াবাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে সেপটিক ট্যাংকের ভেতর পাওয়া যায় একটি ওড়না ও নখের অংশ। কিন্তু মরদেহ না পাওয়ায় মঙ্গলবারই সাকিবকে নিয়ে বগুড়া ফিরে যায় পুলিশ।’
নিহত কলেজছাত্রী নাজনীন
ওসি আরও বলেন, ‘বুধবার সকালে ওই ধানক্ষেতে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। আমরা গিয়ে মরদেহটি নাজনীনের বলে নিশ্চিত হই। তার পরিবারে খবর পাঠানো হয়েছে। বগুড়া থেকে তারা আসবেন।’
গৌরনদী থানা সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব বলেছেন, নিজেকে সচ্ছল পরিবারের ছেলে পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু গত ২৪ মে তার বাড়ি গিয়ে নাজনীন জানতে পারেন যে তারা দরিদ্র পরিবারের। তার বাবা ভ্যানচালক। এসব বিষয় গোপন করে বিয়ে করায় নাজনীন ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়।
সাকিব বলেন, সে সময় ‘ভিক্ষুকের ছেলে’ বলে গাল দেয়ায় নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি।