পটুয়াখালী শহরের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত শুভাশিষ মুখার্জি ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ এনে পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত খোকন চন্দ্রের স্ত্রী রিতা চ্যাটার্জি।
তিনি বলছেন, বসতবাড়ি থেকে জোরপূর্বক উৎখাতসহ তাদের জায়গা-জমি দখল করতে গত ২৫ মে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে হামলা চালান শুভাশিষ মুখার্জি। বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা বানাতেও পারি, আবার বাতিলও করতে পারি।’
ওই হামলার প্রতিবাদে এবং তার হাত থেকে মুক্তি পেতে এ সংবাদ সম্মেলন করছেন বলে জানান রিতা চ্যাটার্জি।
রিতা চ্যাটার্জির এ অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন শহরের সেন্টারপাড়ায় চয়নিকা স্টোরের মালিক শুভাশিষ। তার দাবি, বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ব্যবহার করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী শুভাশিষ মুখার্জি
লিখিত বক্তব্যে রিতা চ্যাটার্জি বলেন, পটুয়াখালী মৌজার ১৯২৮ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৬৮০০ ও ৬৮০১ দাগে শহরের সেন্টারপাড়ায় জমিদার আমল থেকে পূর্বপুরুষদের জমিতে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন তারা। তাদের জরাজীর্ণ বসতবাড়ির (বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের) সংস্কার কাজ প্রায় শেষের পথে। এমন সময় গত ২৫ মে সকালে শহরের ভূমিদস্যু ধনাঢ্য ব্যক্তি শুভাশিষ মুখার্জি ও তার লাঠিয়াল বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালায়।
ওই সম্পত্তির একটি অংশের মালিক দাবি করে শুভাশীষ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সম্পর্কে ‘কুরুচিপূর্ণ’ ভাষা ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে রিভলবার বের করে পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন শুভাশিষ।
রিতা চ্যাটার্জি বলেন, ‘‘অবৈধ টাকার অহঙ্কারে শুভাশিষ গর্জন করে বলে, ‘মুক্তিযোদ্ধা বানাতেও পারি, আবার বাতিলও করতে পারি। এরপর বিভিন্ন নাটক সাজিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে চাকরিচ্যুত ও আত্মসম্মান বিনষ্ট করার হুমকি দেয় শুভাশিষ।’’
রিতা চ্যাটার্জি জানান, তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত খোকন চন্দ্র চ্যাটার্জি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানোর দায়ে হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও আজ শুভাশিষ মুখার্জির অত্যাচারে তার উত্তরসুরিরা সঙ্কটাপন্ন জীবনযাপন করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদের আত্মীয় সাংবাদিক মনোজ কান্তি কর রানা কীভাবে সাংবাদিকতা করেন তা দেখে নেয়ার হুমকিও দেন শুভাশিষ।
রিতা চ্যাটার্জি বলন, শুভাশিষ মুখার্জির এসব কার্যক্রমে অতিষ্ঠ হয়ে ও নিরাপত্তাহীনতায় পটুয়াখালী সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় চাকরি করে সেখান থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে চয়নিকা স্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে আজ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন শুভাশিষ। যে থাকতো এক সময় পরের ঘরে, তার আজ সম্পত্তির অভাব নাই।’
কুয়াকাটায় নামে-বেনামে শুভাশিষের একাধিক হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে উল্লেখ করে রিতা চ্যাটার্জি বলেন, ‘হুন্ডি আর সুদের কারবার করে, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা ভারতে পাচার করছেন শুভাশিষ। পশ্চিমবঙ্গের বাগুইহাটিতে হুন্ডির ফার্ম খুলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন।
‘পশ্চিমবঙ্গের হাবড়ায় নিজ নামে ৩৫ কাঠার জমির ওপর সুরম্য অট্টালিকা সমৃদ্ধ এক বিশাল বাংলো রয়েছে তার। সেখানে একাধিক বাড়ি করেছেন শুভাশিষ। মূলত এই অবৈধ অর্থের অহঙ্কারেই শুভাশিষ সবকিছু ম্যানেজ করে।’
রিতা চ্যাটার্জির অভিযোগ, শুভাশিষ মুখার্জি তার অবৈধ কর্মের সহচর তাপস ঠাকুরের মাধ্যমে বিনা লাইসেন্সে কোটি কোটি টাকার সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকন চন্দ্রের পরিবার এবং সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে শুভাশিষ মুখার্জি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সততা নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার সম্মানহানি করার জন্যই এ সব অভিযোগ আনা হচ্ছে। ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সম্মান করি। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো একটি সেন্সিটিভ ইস্যুকে ব্যবহার করে আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কোনো রিভলবার নেই এবং ঘরের কাজ করার সময় সেখানে আমি উপস্থিতও ছিলাম না। থানা-পুলিশকে বলার পর তারা গিয়ে কাজ থামিয়ে দিয়েছে।’
ভারতে বাড়ি আর হুন্ডির কারবারের অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোরশেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।