স্বামীর মৃত্যুর পর পাঁচ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন ৬৫ বছর বয়সী হালিমা বেগম। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের খাইয়ে লালন-পালন করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে বউয়ের কথায় ছেলে তাকে ঝাড়ুপেটা করবে- এমনটা কল্পনায়ও ছিল না তার।
ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের মধ্য কালমেঘা গ্রামে। ফেসবুকে ঘটনার খবর পেয়ে হালিমা বেগমের কাছে ছুটে যান ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি।
হালিমা বেগম গ্রামের মৃত বাহের আলী হাওলাদারের স্ত্রী। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাও বিয়ে করে আলাদা ঘরে বসবাস করে। বয়সের ভারে আগের মতো কাজ করতে পারেন না হালিমা। ছোট ছেলে দুলালের ঘরে থাকেন তিনি। সংসারে টুকিটাকি নিয়ে দুলালের স্ত্রীর সঙ্গে মাঝে মাঝেই ঝগড়া বাঁধে। একাধিকবার মীমাংসাও করেন স্থানীয় লোকজন।
ছেলে ঝাড়ুপেটা করার ঘটনা হালিমা সোমবার কালমেঘা ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানকে জানান।
মিজানুর রহমান জানান, মৌসুম শেষে ক্ষেত থেকে মুগডালের গাছ তুলে আনতে হয়। শাশুড়ি হালিমা বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ক্ষেতে যেতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয় পুত্রবধূ। রোববার রাতে দিনমজুরের কাজ শেষে বাড়ি ফেরেন হালিমার ছেলে দুলাল। তখন তার কাছে শাশুড়ির বিরুদ্ধে নালিশ করেন পুত্রবধূ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হালিমাকে ঝাড়ুপেটা করেন দুলাল।
ইউপি সদস্য মিজানুর জানান, হালিমা বেগমকে ঝাড়ুপেটা করার বিষয়টি নিয়ে দুলালের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকেও হয়রানির শিকার হতে হয়। নালিশ করায় দুলাল তার মাকে ঘর থেকেও বের করে দেন।
হালিমা বেগম বলেন, ‘বউয়ের কথায় দুলাল মোরে ঝারু (ঝাড়ু) দিয়া মারসে। হেয়ার পরেও তার লাইগ্যা মোর কোনো অবিযোগ (অভিযোগ) নাই। মুই তারে বরদোয়া (অভিশাপ) দেলে হে ধ্বংস হয়ে যাইবে। মুই তারে মাফ কইররে দিসি।’
স্থানীয় এক ব্যক্তি ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে আপ করেন। ফেসবুক থেকে ঘটনা জানার পর কালমেঘা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সবুজ মিয়া হালিমার বাড়িতে যান। পরে দুলালকে ডেকে পাঠান। দুলাল তার অপরাধ স্বীকার করে ভবিষ্যতে আর করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ভুল স্বীকার করে মায়ের পা ধরে মাফ চান।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সবুজ মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি ফেসবুকে দেখার পর আমি হালিমার খোঁজ নিতে যাই। সব ঘটনা শোনার পর দুলালকে ডেকে বুঝিয়ে বলি। দুলালের অনুশোচনা হয়। সে মাফ চায়। আমি মানবিক কারণে ছুটে গিয়েছিলাম, ওই বৃদ্ধাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছি এবং তার পাশে আমরা সবসময় থাকব।’