চলাচলের ভোগান্তি দূর করতে শেরপুরের শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী আদিবাসী এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার দুটি বেসরকারি সংস্থা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেতু দুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। একটি পাহাড়ি ঝরনার ওপর সেতু নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন হারিয়াকোনা গ্রামের বাসিন্দারা।
চার হাজার আদিবাসী মানুষের গ্রামটিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বছরে উৎপাদিত হয় লাখ লাখ টাকার সবজি। কিন্তু এই গ্রামটির ভেতর দিয়ে পাহাড়ি ঝরনা বয়ে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল।
ঝরনার ওপর কোনো সেতু না থাকায় শুকনা মৌসুমে অনেক কষ্টে ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল ও সাইকেল দিয়ে মালামাল পরিবহন করতেন স্থানীয়রা। তবে বর্ষা মৌসুমে মানুষের চলাচলই দুরূহ ছিল।
সেতু বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও হারিয়াকোনা মিশনারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিপুণ ম্রংয় বলেন, ‘বর্ষায় সড়ক ও ঝরনার অবস্থা হয় আরও বেগতিক। ওই সময় স্কুলে যেতে পারে না ছাত্রছাত্রীরা। গর্ভবতী মা ও অসুস্থদের চিকিৎসাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
তিনি জানান, এলাকাটি ভারত সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় টহল দিতে হয় বিজিবির। প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয় এনজিও কর্মীদেরও। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে ঝরনার ওপর সেতু না থাকায় চলাচলে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এখানে সেতু নির্মাণে কেউ এগিয়ে আসেনি।
শ্রীবরদী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা জানান, সেতু নির্মাণে এগিয়ে আসেন বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের সদস্যরা। তারা এ জন্য জানুয়ারিতে সমাবেশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দেন। পরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয় উপজেলা প্রশাসন।
তিনি বলেন, ‘ওই সহায়তা সেতু নির্মাণের জন্য অপ্রতুল ছিল। তাই আমরা উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, কারিতাসের সদস্যরা ও গ্রামবাসী মিলে কাঠের সেতু নির্মাণে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিই। মাটি কাটাসহ অন্য সব কাজ বিনা পরিশ্রমিকে করেন স্থানীয়রা।’
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা আক্তার বলেন, ‘এখানকার মানুষের ভোগান্তির চিত্র দেখে নিজে থেকেই সেতু দুটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। পরে উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়ন আর এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু নির্মিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে স্থায়ীভাবে একটা ব্যবস্থা করা হবে।’