বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে অন্তত ১০ বছর আগে। তিনি আর বিয়ে করেননি। থাকেন বাবার বাড়িতে। অথচ চেয়ারম্যান তাকে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। আরেক আত্মীয়ের স্ত্রীকেও তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতার সরকারি কার্ড করে দিয়েছেন, যিনি ১২ বছর আগে সর্বশেষ অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন।
ঘটনা জানাজানি হলে এভাবে ভাতা দেয়ার কথা চেয়ারম্যান নিজে স্বীকারও করেছেন।
এ ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার সারিয়াকান্দির বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদে। সংরিক্ষত তিন নারী সদস্য ও ওয়ার্ড সদস্যরা চেয়ারম্যানের এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাদের দাবি, বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বরাবরই অনিয়ম করেন।
সোমবার (৩১ মে) উপজেলার কড়িতলা বাজারে ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় ওই দুই নারীর ভাতার টাকা তুলতে এসে চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জনতার তোপের মুখে পড়েন। তখন থেকেই এলাকায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা হওয়া জরুরি।
বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া ওই নারীর নাম চায়না বেগম। তিনি বোহাইল ইউনিয়নের চরমাঝিরা গ্রামের বাসিন্দা। আর চেয়ারম্যানের ভাতিজা বউয়ের নাম মিনতি বেগম। মিনতির স্বামীর নাম আলমগীর হোসেন। তাদের বাড়ি বোহাইল চরে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এতে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীদের শর্ত ও যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, কোনো নারী প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভধারণের সময় যে কোনো একবার ভাতার আওতায় আসবেন। বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার বেশি হবে। মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। দরিদ্র বা প্রতিবন্ধী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেবলমাত্র বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বসবাস করেন এবং নিজের বা পরিবারের কৃষিজমি কিংবা মৎসজমি নেই এমন নারী এ ভাতা পেতে পারেন। উপকারভোগী নির্বাচনের সময় অবশ্যই ওই নারীকে অন্তঃসত্ত্বা থাকতে হবে। মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে নারী তিন বছর প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে মাসিক ভাতা পাবেন।
সারিয়াকান্দির বোহাইল ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোহাইল ইউনিয়নের চর মাঝিরা গ্রামের চায়না বেগমের সঙ্গে ১০ বছর আগে একই গ্রামের ইমদাদুল হকের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। তখন থেকে চায়না একাই বাবা মোজা প্রামানিকের বাড়িতে বসবাস করেন।
ছয় মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার নামে একটি মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা না হলেও একই ইউনিয়নের বোহাইল চরের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মিনতি বেগমকেও মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। মিনতির সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স প্রায় ১২ বছর। মিনতি বেগম ইউপি চেয়ারম্যানের আপন বড় ভাই সাহাদাত হোসেনের ছেলে আলমগীরের স্ত্রী।
বোহাইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রহিমা বেগম, সাহিদা বেগম ও নাছিমা বেগম অভিযোগ করেন, গত ডিসেম্বরে পরিষদের সমন্বয় সভায় চর এলাকার ৬০ জন গর্ভবতীর নামে ভাতা কার্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত নারী নির্বাচন করার বিষয়টিও উঠে আসে সভায়। কিন্তু চেয়ারম্যান বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া ও নিজের ভাতিজার স্ত্রীকে ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন।
প্যানেল চেয়ারম্যান ও এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাদশা আকন্দ ও দুই নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, ওয়ার্ড সদস্য ও মহিলা সদস্যদের দুজন করে গর্ভবতী নারীর নাম দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো কথা রাখেননি। তিনি নিজের ইচ্ছামতো গর্ভবতী নারীদের নামের তালিকা তৈরি করেছেন।
তবে নিজের ইচ্ছামতো তালিকা তৈরির কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘আমি সবার মতামত নিয়ে তালিকা করেছি। যাদের নামের কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ আমার ভাতিজার স্ত্রী মিনতি বেগম ও বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া চায়না বেগমের নাম আমার অজান্তে তালিকায় উঠেছে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে এবং ঘটনার সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’