বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্লুইসগেটের সুবিধাভোগীরা এখন ভুক্তভোগী

  •    
  • ১ জুন, ২০২১ ১৯:৫৫

বালিয়াতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা দেলোয়ার গাজী বলেন, ‘এবার ইয়াসের সময় এই স্লুইসগেট থেকে খালে জোয়ারের পানি ঢুকে উভয় পারের লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এলাকার কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লবণ-পানি ঢুকেছে পুকুরে, ফসলি জমিতে। এই স্লুইসগেট এখন আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘এই সুলিজ এহন মোগো কোনো কামে তো আয়ই না উল্ডা পানি ঢুইক্কা মোগো বাড়িঘর সব তলাইয়া হালায়, এইডার আর কোনো দরকার নাই, অয় ভাইঙ্গা হালান নাইলে এইডারে সরাইয়া দেন, মোরা এডা লইয়া খুব বিপদের মইদ্দে আছি।’এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন আকুতি জানান আশি বছর বয়সী নুরুল হক।ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকারের বানানো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেখেছেন তিনি। বাঁধের ভেতরের বাসিন্দাদের পানির প্রয়োজন মেটাতে স্লুইসগেট নির্মাণের কথা মনে আছে তার।নুরুল হক জানান, বিষখালী নদীর পেটে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, একই সঙ্গে একটি পাঁচমুখো স্লুইসগেটও।

পাথরঘাটার কালমেঘা বাজার গড়ে উঠেছিল বাঁধের ওপর। বিশাল চওড়া সেই খালের স্লুইসগেট থেকে সশব্দে জোয়ারভাটা চলত। পাঁচটি মুখে লোহার ভারী পাঁচটি গেট ছিল। সেসবের কিছুই নেই এখন।

বাংলাদেশ সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আশি ও নব্বইয়ের দশকে নতুন করে বাঁধ ও হাইড্রোলিক স্লুইচগেট নির্মাণ করে। রক্ষণাবেক্ষণের লোকের অভাবে ভেঙেছে স্লুইসের ঢাকনা, এখন ইচ্ছামতো জোয়ার ঢোকে, ভাটায় পানি শুকায়। ফলে প্রয়োজনের সময় পানি মেলে না আর নিষ্কাশনের সময় কাজে আসে না স্লুইসগেট।বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীর বেড়িবাঁধের ওপরে ষাটের দশকে ৩৮০টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছিল। এর বেশির ভাগই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল।১৯৭০ সালের বন্যার পর আরও কিছু স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। আশির দশকে নদীভাঙনের কবলে ভেঙে যাওয়া স্লুইসগুলো পুনর্নর্মাণ করা হয়। নব্বই ও ২০০০ সালের পর কয়েক দফায় ভাঙনে বিলীন হওয়া স্থানে আবারও স্লুইসগেট বানানো হয়।বরগুনা পাউবোর ২২টি পোল্ডারের মধ্যে ২০টিতে মোট ৩৮০টি স্লুইসগেট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই নদী লাগোয়া বেড়িবাঁধের ওপর। নদী সংযুক্ত খালে পানি প্রবাহের জন্য এই গেটগুলো বানানো হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলাবদ্ধতা নিরসনে স্লুইসগেটগুলোর অধিকাংশই কোনো কাজে আসছে না। উপকারভোগীরা পরিণত হয়েছেন ভুক্তভোগীতে।তারা জানান, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব স্লুইসগেট অকার্যকর হয়ে উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় জলোচ্ছ্বাসের অন্যতম কারণ ছিল এসব স্লুইসগেট।বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চালিতাতলী এলাকার পায়রা নদীর স্লুইসটির পানি নিয়ন্ত্রণের লোহার গেট ভেঙে গেছে অনেক আগেই।ওই এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার গাজী বলেন, ‘এবার ইয়াসের সময় এই স্লুইসগেট থেকে খালে জোয়ারের পানি ঢুকে উভয় পারের লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এলাকার কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লবণ-পানি ঢুকেছে পুকুরে, ফসলি জমিতে। এই স্লুইসগেট এখন আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি জানান, একই অবস্থা তালতলী উপজেলার বগী বাজার, পঁচাকোড়ালিয়া এলাকার দুটি স্লুইসগেচের। এ ছাড়াও বিষখালী ও বলেশ্বর নদের খালের সঙ্গে যুক্ত স্লুইসগুলোরও ঠিক একই অবস্থা।জেলার সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা এলাকা। স্লুইসগেটকে কেন্দ্র করেই সেখানে বাজার গড়ে উঠেছিল। বাজারটির নাম পদ্মাস্লুইস। সেখানে স্লুইচটির লোহার গেট নেই, ব্যবস্থা নেই জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণের। ইয়াসের সময় জোয়ারের পানি ঢুকে আশপাশের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়।

পদ্মা এলাকার জহির রায়হান বলেন, ‘আমরা এই স্লুইসটির কারণে বারবার জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সেই সিডর থেকে এখন পর্যন্ত সব ঘূর্ণিঝড়ে খালে অবাধে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। স্লুইসটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।’

পায়রা নদীর ভাঙনে পড়েছে আমতলীর ছোটবগী ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীর মোহনার কোলঘেঁষা চরপাড়া গ্রামের বেড়িবাঁধ। স্লুইসগেটের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, ‘বাঁধের পাশাপাশি স্লুইচগেটগুলোর সংস্কার জরুরি। স্লুইসগেটের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢোকে। আমরা এরই মধ্যে বেশ কিছু স্লুইসের সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছি। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কারের আওতায় আনা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর