প্রাক মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হওয়া বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা।
সোমবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে টইটম্বুর ছিল চাক্তাই, মহেশসহ বিভিন্ন খাল। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হয় জোয়ার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জোয়ার শুরুর পর খাল হয়ে ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়ে পানি। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চল।
নগরীর কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ আবাসিক, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে।
কাতালগঞ্জের ব্যবসায়ী রাহুল বড়ুয়া বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে পানির জ্বালা সইছি। স্লুইসগেট হবে, বেড়িবাঁধ হবে, নিরসন হবে জলাবদ্ধতা- এ রকম আশ্বাস দেয় সবাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
আগ্রাবাদ ২৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা ইয়াসিন হিরা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে হওয়া জোয়ারের সময় পানি উঠেছিল। তবে কম। মঙ্গলবার বেশি পানি উঠেছে।’
জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে দেশে ভোগপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও। বেশ কিছু সড়কে পানি উঠলেও আড়তে অবশ্য পানি ঢুকতে পারেনি। আড়ত ও দোকানের চারপাশে ইট-সিমেন্টের বাঁধ দেয়ায় রাস্তায় পানি থাকলেও দোকানে ঢুকতে পারেনি।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘রাস্তায় পানি উঠে গেছে। এ কারণে পণ্য নিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না।’
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার আগের ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ১২৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু এখনও সক্রিয় থাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন এ ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।’
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কোনো নতুন সমস্যা নয়। কয়েক দশক ধরেই নগরবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় সরকার নানা প্রতিশ্রুতি ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও জলাবদ্ধতার নিরসন করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে একটি প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০২০ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডও পৃথক আরেকটি প্রকল্পের কাজ করছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না কোনো প্রকল্পই। এতে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর।