বুড়িমারী স্থলবন্দরের এক পাথর ব্যবসায়ীকে রংপুর মহানগরীতে জিম্মি করে নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ধারণের পর টাকা আদায়ের অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রংপুরের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল ও মোকসেনুল আরেফিন রুবেল।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চলকে ৩০ মে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে ও মুকসেনুল আরেফিন রুবেলকে তার নিজ বাসা রাধাবল্লভ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা জানান, আরিফ হোসেন নামে এক পাথর ব্যবসায়ী গত ২১ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে দুই ট্রাক পাথর নিয়ে সংঘবদ্ধ আসামি চক্রের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চলের কথামতো পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে রংপুরে আসেন। চঞ্চল দুই ট্রাক পাথরের মূল্য বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধও করেন।
এর একপর্যায়ে চঞ্চল বুড়িমারীর ওই পাথর ব্যবসায়ীকে ব্যবসার স্বার্থে বাসা ভাড়ার প্রস্তাব দেন। রাতেই নগরীর কেল্লাবন্দর সরদারপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে তাকে উঠিয়েও দেন চঞ্চল।
রাত ১০টার দিকে এক অপরিচিত নারীকে নিয়ে ওই পাথর ব্যবসায়ীর ভাড়া বাসায় ঢোকেন চঞ্চল। কিছুক্ষণ পর চক্রের তিন-চার সদস্যও হঠাৎ ওই বাসায় যান। পরে তারা অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই নারীর সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি ধারণ করেন।
এ ঘটনায় রংপুরের কোতোয়ালি থানায় চাঁদা দাবি, প্রতারণা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় পিবিআই পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এসআই নুরে আলম সিদ্দিক গত ৩০ মে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চলকে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে ও মুকসেনুল আরেফিন রুবেলকে তার নিজ বাসা রাধাবল্লভ থেকে গ্রেপ্তার করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আসামিরা ওই সময় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক সই নেন। পরবর্তীতে আসামি চঞ্চল বিষয়টি সুরাহা করবেন- মর্মে আশ্বস্ত করেন। তিনি নিজেও পরিস্থিতির শিকার বলে ব্যবসায়ীর সঙ্গে অভিনয় করেন। ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহার স্বার্থে আরও ছয় ট্রাক পাথর বা সাত লাখ টাকা রংপুরে পাঠানোর প্রস্তাবও দেন চঞ্চল।
এদিকে জিম্মি করে রাখার সময় ব্যবসায়ী আরিফ হোসেনের কাছ থেকে পাথর বিক্রির দুই লাখ টাকা কেড়ে নেয় চক্রটি। পরে তাকে ছয় ট্রাক পাথর বা সাত লাখ টাকা দেয়ার শর্ত দেয়। না দিলে নারীর সঙ্গে তোলা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন চক্রটির সদস্যরা।
পিবিআই জানায়, তদন্তে গ্রেপ্তারকৃত আসামি দুজন স্বীকার করেন যে, তারা প্রায়ই রংপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন।
তদন্তে আরও জানা যায়, ওই নারীকে ঘটনার দিন আসামি নজরুল ইসলাম লাইটু ফোন করে ডেকে আনেন। তিনি ওই নারীর কাছে একজন নারী রোগীকে ক্লিনিকে পাঠানোর সাহায্য চান।
উল্লেখ্য, ওই নারী রংপুর মহানগরীর বেশকিছু ক্লিনিকে রোগী সরবরাহ করে থাকেন।
রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, যে নারীকে দিয়ে ফাঁসানো হয়, সেই নারী স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, এ ধরনের সংঘবদ্ধ ঘৃণ্য অপরাধ তদন্তে পিবিআই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।