বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জীবনে প্রথম একসঙ্গে ৩ হাজার টাকা পেলাম’

  •    
  • ১ জুন, ২০২১ ১৭:২০

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই ফ্যাক্টরিতে যে ৪৩ জন ভিক্ষুক কাজ করছেন, তাদের আগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হবে। এ ছাড়া উৎপাদিত কাগজের প্যাকেট বিক্রির লভ্যাংশের একটি অংশ তারা পাবেন।’

‘মানুষের কাছে হাত পেতে এক-দুই টাকা চেয়ে নিয়েছি। সারা দিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে যা পেয়েছি তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছি। কোনো দিন একসঙ্গে তিন হাজার টাকা গুনে দেখিনি। জীবনে এই প্রথম একসঙ্গে তিন হাজার টাকা পেলাম। আমরা যারা এখানে কাজ করছি, তারা সবাই এই টাকা পেয়ে খুশি।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চৌরখুলী গ্রামে নির্মিত প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি ‘অবলম্বন’-এ কাজ করা শ্রমিক সোনামতি বেগম।

এই কারখানায় চাকরি নেয়ার আগে ৫৫ বছর বয়সী সোনামতি বেগম ভিক্ষা করতেন। সোনামতি বেগমের মতো এ কারখানায় চাকরি পেয়েছেন আরও ৪৩ ভিক্ষুক।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা মঙ্গলবার এই ৪৩ জনের হাতে তাদের কর্মজীবনের প্রথম মাসের বেতন তুলে দেন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান শুভসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ১ মে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা এলাকার ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি ‘অবলম্বন’ উদ্বোধন করেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে গত ডিসেম্বরে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরির নির্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ হয় এপ্রিল মাসে।

এই ফ্যাক্টরিতে ৪৩ জন ভিক্ষুককে চাকরি দেয়া হয়। চাকরি পাওয়ার পরে ভিক্ষুকদের হাত হয়ে ওঠে কর্মজীবীর হাত।

কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, ‘এলাকার ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে সরকারি অর্থায়নে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চৌরখুলী গ্রামে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে এলাকাবাসী স্বাগত জানিয়েছেন। এলাকার ভিক্ষুকরা এখন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে এই প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে চাকরি করছেন।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, কোটালীপাড়ায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত কাগজের প্যাকেটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে সরকারি অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ফ্যাক্টরির নির্মাণ করা হয়। পরে আধুনিক মেশিনপত্র কেনার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্যাক্টরিতে যে ৪৩ জন ভিক্ষুক কাজ করছেন, তাদের আগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হবে। এ ছাড়া এই ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত কাগজের প্যাকেট বিক্রির লভ্যাংশের একটি অংশ তারা পাবেন।’

ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ সফল হলে পরিবর্তন হবে চৌরখুলীসহ গোটা কোটালীপাড়া। এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘ভিক্ষা নয়, এখন থেকে কর্মময় হলো ৪৩ জনের জীবন। তারা এখন কাজ করে সংসার চালাতে পারবেন। এটি আমাদের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ হবে। এ ক্ষুদ্র উদ্যোগটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে সহায়তা করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর