অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়িকন্যা বান্দরবান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দ্বিতীয় দফায় তিন পার্বত্য জেলায় ১ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। জনকোলাহল থেমে গিয়ে পর্যটকশূন্য বান্দরবানের প্রকৃতি যেন তার আগের রূপ ফিরে পেয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পাহাড় যেন আবার নতুন করে সেজেছে।
জেলার প্রবেশপথ কেরানীহাট-বান্দরবানের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে সড়কের দুই পাশে এখন শোভা পাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া, অশোক, সোনালু, জারুল, চম্পা, কড়ইসহ নানা রঙের ফুল। উঁচুনিচু পাহাড়ি পথের চারদিকে সবুজ পাহাড় আর গাছে গাছে ফুলের আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে রক্তরাঙা বৈচিত্র্যময় রূপ।
এ ছাড়া জেলার পর্যটন কেন্দ্র মেঘলা, প্রান্তিক লেক, নীলাচলসহ রাস্তার দুই পাশজুড়ে সজ্জিত নানা রঙের ফুলগুলো জানান দিচ্ছে তার সৌন্দর্যের বার্তা। আর শোনা যাচ্ছে গাছের মগডালে বসে বৈচিত্র্যময় পাখির কিচিরমিচির ডাক। প্রকৃতির এই রূপ-রসের সৌন্দর্য যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের হাতছানি দিচ্ছে।
পথচারী কামাল উদ্দিন বলেন, ‘সারা দেশে সরকারের কড়া লকডাউনের কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। জনগণের আনাগোনা না থাকায় পাহাড়ের প্রকৃতি তার আপন রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। সবকিছু মিলিয়ে অন্যরকম সুন্দর পরিবেশ।’
বীর বাহাদুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ডচিংপ্রু বলেন, ‘কয়েক দিনের বৃষ্টি একদিকে যেমন উষ্ণতা কমিয়েছে, অন্যদিকে প্রকৃতিকে ধুয়েমুছে নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে। কোনার ছোট্ট বাগানটাও আজ বৃষ্টির স্পর্শে রঙিন আর সতেজ হয়ে উঠেছে।’
বান্দরবানের সংবাদকর্মী ক্যমুইঅং মারমা বলেন, ‘বর্ষায় পাহাড়ের প্রকৃতি ফিরে পায় এক নতুন রূপ। চারদিকে সবুজ গাছপালা, পাখির ডাক আর প্রশান্তির বাতাস। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে যেন এক পাহাড়সম মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বর্ষা মৌসুমে দুর্গম পাহাড়ি পথগুলো বেশ ভয়ংকরও বটে।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া জানান, বান্দরবানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বনভূমি বাড়াতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। সেগুলো বড় হয়ে ফুলে ফুলে ভরে গেছে।
বন বিভাগের পাশাপাশি প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে নিজ দায়িত্বে আরও গাছ লাগিয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
চলতি বছরে জেলায় বন বিভাগ থেকে ৬২ হাজার ৫০০ ফলদ, বনজ ও ফুলের চারা উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। বর্ষা শুরু হলেই চারাগুলো বিনা মূল্যে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা শুরু হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।