লকডাউনের কারণে কক্সবাজার সৈকতের বিপর্যস্ত ঘোড়াগুলোর পরিচর্যা নিশ্চিতে প্রশাসনকে নোটিশ পাঠিয়েছে তিনটি বেসরকারি সংস্থা।
‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ নামে এই নোটিশটি রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৩ জনকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) এবং পিপল ফর এনিমল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।
সুপ্রিম কোর্ট ও বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা বিনোদনের অংশ হিসেবে ঘোড়ায় চড়েন। দুই শতাধিক ঘোড়া এই কাজে নিয়োজিত। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শোভা বাড়াতে এসব ঘোড়া ব্যবহার করা হতো। সম্প্রতি করোনার কারণে পর্যটক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় এই ঘোড়াগুলো খাদ্যাভাবে অযত্নে মারা যাচ্ছে।
নোটিশে বলা হয়, ঘোড়ার মালিক ও তত্ত্বাবধায়ক খাদ্যের জোগান না দিয়ে ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে। এর ফলে অসুস্থ দুর্বল ঘোড়াগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
খাবারের অভাবে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পলিথিন বর্জ্য খেয়ে ফেলছে ঘোড়াগুলো। ছবি: নিউজবাংলা
ঘোড়াগুলো রাস্তার পাশে ফেলে রাখা প্লাস্টিক বা পলিথিন বর্জ্য খেয়ে ফেলছে। যার কারণে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার শিকার হচ্ছে। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো প্রাণীকে প্রয়োজনীয় খাবার না দেয়া এবং অসুস্থ অবস্থায় লোকালয়ে মুক্ত করে দেয়াকে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
নোটিশে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে গত এক মাসে খাদ্যাভাবে ২১টি ঘোড়া মারা গেছে। গত বছর প্রথম দফায় লকডাউনের সময় খাদ্যসংকটে ৪০টির বেশি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে।
অসুস্থ ঘোড়াগুলোর চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা, ঘোড়াকে খাবার না দেয়াসহ ঘোড়ার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা মালিক ও তত্ত্বাবধায়কদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে ওই নোটিশে। সেই সঙ্গে এই পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে নোটিশদাতাকে না জানানো হলে নোটিশপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবারের লকডাউন শুরুর পর সৈকতের ঘোড়াগুলোর দুরবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
মালিকের কাছ থেকে ঘোড়া নিয়ে সৈকতে যাওয়া কর্মচারী মোহাম্মদ সিফাত, লুকমান, নুরুল ইসলাম, মো. তারেক, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আকতার হোসেনসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। তারা জানান, কঠোর বিধিনিষেধের আগে সৈকতে এক একটি ঘোড়া নিয়ে প্রতিদিন এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো তাদের। মালিককে ভাড়ার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় থাকত তাদের একেকজনের।
কিন্তু এখন সবকিছু বন্ধ থাকায় ঘোড়ার মাধ্যমে আয়ও বন্ধ। তাই অন্য পেশার মাধ্যমে সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন তারা। ঘোড়ার মালিক রায়হান সিদ্দিকী বলেন, ‘করোনা সব শেষ করে দিয়েছে। পর্যটন ব্যবসা বন্ধ থাকায় এখন টমটম চালিয়ে সংসার চলছে।’
তিনি আরও জানান আর্থিক সংকটের কারণে ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে যতটুকু পারা যায় ঘোড়ার খবর রাখছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যখন আবার পুনরায় সমুদ্রসৈকত খুলবে, পযটক আসবে তখন ফের ঘোড়াগুলো নিয়ে সমুদ্রসৈকতে নেমে পড়বেন।