ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী, মাদক বিক্রেতা, নিরক্ষর, অপরিচিতদের অন্তর্ভুক্তের অভিযোগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এমন অভিযোগে রোববার ‘ত্যাগী ও নেতা-কর্মীর’ ব্যানারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়।
২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা সভাপতি দবিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে তৃণমূলের ভোটে মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও সফিকুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পরে নির্বাচিত নেতৃত্ব ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী।
মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম ভাই হওয়ার অজুহাতে সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির পরামর্শে সেই কমিটি বাতিল করা হয়।
১০ মাস পর ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও আবু হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।
আংশিক কমিটি ঘোষণার পরের দিন দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতা–কর্মীদের বাইরে রেখে বিতর্কিতদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ এনে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠান ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ২২ মে তা অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। ২৭ মে তা ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কমিটিতে ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা জায়গা না পাওয়া ও বিতর্কিতদের নাম দেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। সেই ক্ষোভ থেকে তারা উপজেলা শহরের চৌরাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ সম্পাদক আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় পাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য ও অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে রাখা যাবে না, আর বালিয়াডাঙ্গীতে তাঁর কথা অমান্যের পাশাপাশি সুযোগসন্ধানী-অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ী, নিরক্ষর, রাজনীতিতে অপরিচিত—এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’
সাবেক সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে প্রক্রিয়ায় কমিটি হওয়ার কথা, উপজেলা কমিটি সেভাবে করা হয়নি। ঘোষিত কমিটিতে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, সুযোগসন্ধানী, মাদকসেবী, রাজনীতিতে অপরিচিত এমন ব্যক্তির নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সাবেক সদস্য আজাহার আলী বলেন, ‘এটা জেলা কমিটির মনগড়া পকেট কমিটি হয়েছে। দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত ও জ্যেষ্ঠ নেতা–কর্মীদের বাইরে রেখে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। একটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কমিটি করা হয়েছে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোষিত কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন আবদুস সবুর মিয়া। তিনি উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পারুয়া গ্রামের মৃত বারেক মিয়ার ছেলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বারেক মিয়া পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।’
এ বিষয়ে ঘোষিত কমিটির সম্পাদক আবু হাসনাত বলেন, ‘যারা দলের কর্মকাণ্ডে সব সময় সম্পৃক্ত ছিলেন, যারা সংগঠনের কাজে কর্মদক্ষতা দেখিয়েছেন এসব মূল্যায়নের ভিত্তিতেই এই কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। পদবঞ্চিতরা এ নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা, দাবি আদায়ের কর্মসূচি হতে পারে না, এটা সংগঠনবিরোধী কাজ।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, ‘স্থানীয়দের মতামত নিয়েই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। দলে অনেকেই পদপ্রত্যাশী থাকেন। কিন্তু তাদের সবাইকে পদ দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এ নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো মোটেই কাম্য নয়। এসব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাংসদ মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্পর্কে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।