থানায় ছয় দিন আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মহিউদ্দিন হাসানাত নামে ঝালকাঠির এক কিশোরের পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে।
জয়নাল বর্তমানে সোনারগাঁ থানায় একই পদে কর্মরত।
ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মহিউদ্দিনের বাবা সাবেক সেনাসদস্য মোসলেম আলী খান। এ সময় তিনি ছেলের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
মোসলেম নলছিটি পৌর এলাকার শীতলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ঘুষের বাকি দুই লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ১৭ বছর বয়সী মহিউদ্দিনকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি করে আদালতে হাজির করা হয়।
হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে।
মোসলেম আলীর দাবি, ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ৯ বছর ধরে কারাগারে মহিউদ্দিন বন্দি রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে ছেলেকে ফুসলিয়ে নলছিটির মালিপুর গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরা লিজার সঙ্গে নোটারির মাধ্যমে বিয়ে দেন। মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় বিয়েতে আমার পরিবার রাজি ছিল না।
‘বিয়ের এক বছর পর ঢাকার মণিপুরে নিজের বাসার সামনে থেকে তোফাজ্জেলের ১০ বছর বয়সী ছেলে আশিকুর রহমান রিফাতকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১১ আগস্ট একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরদিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে রিফাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জামাল হোসেন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেন।’ি
মোসলেম আলী জানান, একই বছরের ২১ আগস্ট হত্যায় জড়িত সন্দেহে মহিউদ্দিনকে নলছিটির কাঠিপাড়া গ্রাম থেকে আটক করে পুলিশ। তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয় দিন আটকে রেখে নির্যাতন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জয়নাল আবেদীন।
হত্যা মামলায় মহিউদ্দিনকে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে এবং ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার কথা বলে পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন জয়নাল। টাকা দিলে মামলায় জড়ানো হবেনা বলেও জানান জয়নাল।
তিনি জানান, ২৪ আগস্ট থানায় বসে তার (মহিউদ্দিনের বাবা) কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেন জয়নাল। এরপরও হত্যা মামলায় আসামি করে ২৬ আগস্ট মহিউদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
মহিউদ্দিনের বাবা বলেন, ‘ওই মামলায় ২০১৩ সালের ২ মার্চ আদালতে মহিউদ্দিন হাসানাত ও কুমিল্লার যুবক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত ২০১৮ সালের ২ জুলাই দুই আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। সাইফুল পলাতক থাকলেও মহিউদ্দিন ৯ বছর ধরে কারাগারে।’
মোসলেম উদ্দিন খানের দাবি, তার ছেলেকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আসামি করে ফাঁসানো হয়েছে। ঘুষের সব টাকা পরিশোধ না করায় এসআই জয়নাল আবেদীন ইচ্ছে করেই চার্জশিট দিয়েছেন।
২০১২ সালের ওই ঘটনায় এসআই জয়নালের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন মোসলেম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং তার ছেলের মুক্তি দাবি করেছেন তিনি।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এটা অনেক আগের ঘটনা, তাই সবকিছু না দেখে বলা যাচ্ছে না।’