জরুরি পাসপোর্ট করতে নাটোরের আঞ্চলিক অফিসে গিয়েছিলেন সদর উপজেলার চৌরি গ্রামের সোহেল রানা। সেখানে তার কাছে আনসার সদস্য রেদোয়ান ও শামীম দাবি করেন আড়াই হাজার টাকা।
রাজি হওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসের একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে সোহেলের কাছ থেকে টাকা নেন রেদোয়ান। সোহেল টাকা দিলেও সেই ভিডিও ধারণ করেন নিজের মোবাইল ফোনে।
সেই ভিডিওটি পায় নিউজবাংলা। এরপরই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটিতে যান প্রতিবেদক।
সেখান কথা হয় সোহেলের কাছ থেকে টাকা নেয়া আনসার সদস্য রেদোয়ানের সঙ্গে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। ঘুষের টাকা ফেরতও দেন। তবে এরপর কোনো কথা বলেননি।
পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পর উঠে এসেছে অনিয়মের নানা চিত্র।
কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, এখানে পাসপোর্টপ্রতি দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা দাবি করে একটি সিন্ডিকেট। টাকা না দিলে মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা, তথ্য-বিভ্রান্তির নানা অজুহাতে দিনের পর দিন হয়রানি করা হয় তাদের।
শুধু বাইরের দালাল চক্র নয়, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ সিন্ডিকেটে যুক্ত বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে শহরের চকরামপুর এলাকায় নাটোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালু করা হয়েছিল। সরকারনির্ধারিত ফি অনুযায়ী ১০ বছর মেয়াদি জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৮ হাজার ৫০ টাকা, পাঁচ বছর মেয়াদে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৪ হাজার ২৫ টাকা নেয়ার কথা।
অভিযোগ আছে, আঞ্চলিক অফিসটিতে সরকারনির্ধারিত ফির বাইরে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই দীর্ঘদিন ধরে এটি করা হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ ও ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল ব্রাঞ্চের তথ্যে এই সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন আনসার সদস্য রোদোয়ান, শামীম, স্টোরকিপার মোশারফ হোসেন, অ্যাকাউনটেন্ট সাইফুল ইসলাম, ডাটা এন্ট্রি অফিসার সানোয়ার হোসেন ও উচ্চমান সহকারী শরিফুল ইসলাম।
তাদের মধ্যে নিউজবাংলার কাছে অভিযোগ জানানোর সময়ই গ্রাহকদের ওপর কয়েক দফায় চড়াও হন উচ্চমান সহকারী শরিফুল ইসলাম।
দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা পারেন আপনারা লিখে দেন। আমি কোনো অনিয়ম করি না। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করি।’
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা নিউজবাংলাকে জানান, পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম চলছে। জনগণের হয়রানি বন্ধে বেশ কয়েকবার দালালদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। দ্রুত সেখানে অভিযান চালানো হবে।
পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক আলী আশরাফ জানান, কেউ দুর্নীতি করলে ছাড় দেয়া হবে না। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।