ঈদের দিন কোল্ড ড্রিংকসে নেশাদ্রব্য খাইয়ে নদীর পাড়ে নিয়ে প্রায় অচেতন করে ইমনের গলায় প্রথম ছুরি চালান তার প্রেমিকা। পরে গলায় আরও দুই দফা ছুরি চালিয়ে ইমনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওই তরুণীর নতুন প্রেমিক মো. কামরুজ্জামান। পরে আড়িয়াল খাঁ নদে মরদেহ ফেলে দেন তারা।
মাদারীপুরের শিবচরের বিসিএস পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন ইমন হত্যার ঘটনার এমন বিবরণ দিয়েছেন মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন ইমনের প্রেমিকা।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, মূলত অন্তরঙ্গ ভিডিও ফেরত না দেয়ায় নতুন প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে ইমনকে হত্যার করার পরিকল্পনা করা হয়।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে ওই তরুণীর সহযোগী মেহেদীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ মে মাদারীপুরের শিবচরের চরবাঁচামারা গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয় বিসিএস পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন ইমনের। ইমন উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামের সেকান কাজীর ছেলে। ঈদের দিন শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলার গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির ওসি মো. আল মামুন, দত্তপাড়া ফাড়ির পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার ঘোষ ও এসআই শরীফ আ. রশীদের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত মঙ্গলবার প্রেমিকা ওই তরুণী ও তার সহযোগী মেহেদী ফরাজীকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ইমন ও ওই তরুণীর মধ্যে এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিয়ের সমঝোতায় তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ইমন তার মুঠোফোনে ধারণ করে রাখেন।
ছয় মাস আগে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। সম্পর্ক না থাকলেও ইমন ঢাকা থেকে এলেই ওই ভিডিও ও ছবিগুলো ফেসবুকে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে মিলিত হতেন।
এর মধ্যেই মো. কামরুজ্জামান কামরুল নামের আরেক যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও ইমনের কাছে থাকা ছবি ও ভিডিওগুলো নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন ওই তরুণী।
বিষয়টি কামরুলকে জানান ওই তরুণী। তাদের পরিকল্পনা অনুসারেই ঈদের দিন ইমনকে দেখা করতে বলেন ওই তরুণী।
এ ঘটনায় মামলার পর ডিবি পুলিশকে সংযুক্ত করে পুলিশ সুপার। শিবচরের দত্তপাড়া ফাঁড়ির পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার ঘোষ ওই তরুণীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও ওই তরুণী হত্যার দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তার সহযোগী মেহেদীর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মাদারীপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আল মামুন জানান, এ হত্যাকাণ্ডে চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।