পাবনার ঈশ্বরদীতে লম্বা খুঁটি পুঁতে পৌর শশ্মানে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশল বিভাগ। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, খুঁটি পোতায় শশ্মানের ওই রাস্তাটি দিয়ে এখন কাঁধে করে মরদেহ নেয়ারও কোনো উপায় নেই।
স্থানীয়রা জানান, শশ্মানটিতে পৌরবাসী ছাড়াও কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ মরদেহ দাহ করেন। শশ্মানের পশ্চিমে পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডসহ পাকশী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামবাসীর চলাচলেও দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তারা জানান, শ্মশানে প্রতি বছর শিব চর্তুদ্দশীতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের একমাত্র ‘হর-মুণ্ডমালিনী’ উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এসব বিবেচনায় কাঁচা এই রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য পৌরসভার পক্ষ হতে টেন্ডার করে কাজও শুরু হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, তবে রেলের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশল বিভাগ-২ এর বর্তমান কার্যালয় রাস্তা পাকা করার কাজও এর আগে বন্ধ করে দেয়। সবশেষে বুধবার খুঁটি পুঁতে চূড়ান্তভাবে এই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশল বিভাগ-২ এর কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ‘রেললাইনের পাশে সিগনালের ক্যাবল লাইন রক্ষার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
পাকশী ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ‘বৃটিশ আমলের এই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হিংসাত্মক ঘটনা। শুধু শশ্মানই নয়, এলাকার মানুষের আপদে-বিপদে রোগী নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের জায়গা রাখা হয়নি।’
শশ্মান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘যেভাবে উঁচু করে খুঁটি পোঁতা হয়েছে, তাতে লাশ কাঁধে করে নেয়ারও উপায় নেই। এখানে মরদেহ পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্সও ভ্যানে করে নিয়ে আসা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে ক্যাবল লাইন রয়েছে, সেখান থেকে পশ্চিম দিকে অনেক দূরে অন্তত পিকআপ- অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার জয়াগা রেখে খুঁটি পোঁতা হলে যাতায়াতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকত না।’
শশ্মান কমিটির সভাপতি অধ্যাপক উদয়নাথ লাহিড়ী বলেন, ‘বাংলাদেশে রেললাইনের ধার দিয়ে অনেক রাস্তা রয়েছে। সেসব রাস্তা বন্ধ না করে ঈশ্বরদীর শশ্মানের এই রাস্তা বন্ধের ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরদীতেই রেলের কোয়ার্টারসহ বিপুল জায়গা-জমি বেদখল হয়ে অবৈধভাবে ভোগ-দখল করলেও সেগুলো উদ্ধারে রেলের কোনো উদ্যোগ নেই। আর শান্তিপ্রিয় হিন্দু সম্প্রদায়ের শশ্মানে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করতে পাকশী রেল মেতে উঠেছে।’
অবিলম্বে খুঁটি তোলা না হলে হিন্দু সম্প্রদায়সহ এলাকাবাসী এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলেও জানান তিনি।
ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা চান্না মণ্ডল বলেন, ‘ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে আঘাত করার আগে শশ্মান কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।’
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ঈশ্বরদী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল রায়।
তিনি জানান, দ্রুত সময়ের মধ্য রাস্তা অবমুক্ত না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হবে।
ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ইসাহক আলী মালিথা বলেন, ‘বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। শুধু শশ্মানই নয়, আমার ৩ নং ওয়ার্ডের অনেক মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে।’
পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা শোনার পরই আমি পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) সঙ্গে কথা বলেছি। লাশ নিয়ে শশ্মানে যাওয়া এবং এলাকার মানুষের বিপদে অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার মতো রাস্তা রাখার প্রয়োজনীতার কথাও জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ডিআরএম এখন স্টেশনে নেই। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’