জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন।
শনিবার দুপুরে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে রয়েছে। ১৭ মে হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়, একে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার জন্য। যা নিয়ে আমরা মর্মাহত, ব্যথিত ও হতাশ হয়েছি।’
জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে রেখে এনআইডি সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বরিশালের নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মো. আলাউদ্দীন বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাটি অন্যত্র নিলে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা করার সাংবিধানিক যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সেবাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া হয় নতুনভাবে অবকাঠামো তৈরিতে হাজার কোটি টাকার অপচয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এক সময় আন্দোলন করেছিলেন নির্বাচনকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য, তারই আন্দোলনের ফসল ছবিসহ ভোটার তালিকা। আর ভোটার তালিকার বাইপ্রোডাক্ট হচ্ছে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র।
‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প রয়েছে, তা চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এ কাজটিও জাতীয় পরিচয়পত্র বেইজ, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে গেলে ইভিএম প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।’
এনআইডির দায়িত্ব পাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে দিতে যাচ্ছে সরকার। এতদিন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্বটি পালন করে আসছিল।
এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ দেখবে।
গত ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনের সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিমের সই করা চিঠিতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজটি সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দিতে তিনটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রথমত, সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর রুল ১০ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করাসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর ব্যবস্থা নেয়া।
তৃতীয় ও শেষ নির্দেশনায় রয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
বর্তমানে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা ও এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছে ইসি। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন ডাটাবেইজকে হালনাগাদ রাখা এবং প্রযোজ্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি-পরিচয় যাচাই সেবাও দেয় সংস্থাটি।
২০০৭-২০০৮ সালে দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের অংশ হিসেবে ছবিযুক্ত এনআইডি কার্ড ইস্যু করা শুরু হয়। ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনটি পাস হওয়ার পর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এনআইডি বিভাগ তৈরি করা হয়েছিল।