ভাইরাল হওয়া ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনকারী ‘টিকটক হৃদয়ের’ এক সহযোগীর পরিচয় পাওয়া গেছে।
ভিডিওতে গোলাপি ফুলহাতা গেঞ্জি পরা যুবককে আলামিন হিসেবে শনাক্ত করেছেন তার বাবা। তাদের বাড়ি যশোরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়।
ভিডিওতে টিকটক হৃদয়ের সহযোগী হিসেবে আলামিনকে দেখে যশোরের লোকজনের আলোচনায় আসে তার নাম। সাংবাদিকরা শহরের চাঁচড়ায় খুঁজে বের করেন তার বাড়ি। তারা কথা বলেন আলামিনের বাবাসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে।
চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায় এক প্রতিবেশী জানান, আগে থেকেই বেপরোয়া আলামিন দেশে দুটি বিয়ে করেছেন। দুই সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের ফেলে তিনি ভারতে চলে যান। ভিডিওতে তিনি গোলাপি ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের ব্যান্ড রয়েছে।
নিজের ছেলের বিষয়ে তার বাবা বলেন, ‘আলামিন বাড়িতে বসে কী সব খেত। বাইরের লোক বাড়িতে আসত, তাই আট মাস আগে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনেছি, আলামিন ভারত গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কী করছে জানি না, তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’
যশোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ তাসমিম আলম জানান, আলামিনের বিষয়ে যশোর পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই, মামলাও নেই। তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
২১ মে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে নৃশংস যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ‘টিকটক হৃদয়’সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের খবরও দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। গ্রেপ্তার সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পালানোর চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ হন ‘টিকটক হৃদয়’। পরে ভারতের বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে দেশে আনার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশি এই তরুণের পুরো নাম রিফাদুল ইসলাম হৃদয়। তিনি ‘টিকটক হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো) ঢাকার মাধ্যমে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হৃদয়ের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এখন হাতিরঝিল থানায় করা মামলার তদন্তের জন্য টিকটক হৃদয়সহ অন্যান্য আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’
ভারতের কেরালায় বাংলাদেশি তরুণীকে নৃশংস যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিলের বাসিন্দা রিফাদুল ইসলাম হৃদয় রয়েছেন, যিনি এলাকায় ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ নামে পরিচিত। গ্রেপ্তার অপর চারজনের মধ্যে তিনজন হলেন মোহাম্মদ বাবা শেখ, সাগর ও অখিল। গ্রেপ্তার নারীর পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মহিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের লিংক আপে থাকা এনসিবি ঢাকা যোগাযোগ রক্ষা করে বিদেশে থাকা আসামিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে থাকে। তবে কেরালায় নির্যাতনের ঘটনায় ‘টিকটক হৃদয়’সহ অন্য আসামিদের বিষয়ে দিল্লির এনসিবি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের নৃশংস যৌন নিপীড়নের ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দুই দেশের পুলিশ ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। এরই একপর্যায়ে বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের অভিযানে টিকটক হৃদয়সহ পাঁচ আসামি গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তারের সময় পালানোর চেষ্টাকালে সেখানকার পুলিশ তাকে পায়ে গুলি করে। ‘টিকটক হৃদয়’ সেখানকার স্থানীয় হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন।