বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা: গোপালগঞ্জের দুই ইউনিয়নে বিশেষ লকডাউন

  •    
  • ২৮ মে, ২০২১ ২৩:৪৩

তেলিভিটা গ্রামের মানুষ যাতে অন্যত্র যাতায়াত করতে না পারে, সে জন্য গান্ধিয়াশুর-তেলিভিটা ঘাটের খেয়া (নৌকা) চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সাতপাড়, বৌলতলী, পাটকেলবাড়ী ও গান্ধিয়াশুর এলাকার হাটবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগামী সাত দিন বন্ধ রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জে এখন আতঙ্কিত এক গ্রামের নাম তেলিভিটা। মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের পাশের এই গ্রামকে সবাই বিলাঞ্চল হিসেবেই চেনে। সেই গ্রামেই গত তিন দিনে ৪৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় আশপাশের এলাকায়ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

সেখানে সব সময় মনিটরিং করছেন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এলাকায় ঘুরে ঘুরে আরও লোকজনের নমুনা নেয়া হচ্ছে। সেগুলোও দ্রুত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো আরও অনেকের দেহেই করোনা সংক্রমণ ধরা পড়বে।

দূর থেকে পুরো গ্রামকে যেন মনে হয় নিভৃত একটি পল্লি। সাড়াশব্দহীন। সেখানকার যেসব লোকজন আক্রান্ত হননি তারাও ভয়ে আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে করোনার বিস্তার রোধে সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের তেলিভিটা গ্রামসহ আশপাশের এলাকাকে বিশেষ লকডাউনের আওতায় আনা হয়।

শুক্রবার প্রশাসন লকডাউনের আওতা বাড়িয়েছে। সদর উপজেলার সাতপাড় ও সাহাপুর ইউনিয়নকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।

গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাকিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

লকডাউনে বন্ধ রয়েছে দুই ইউনিয়নের দোকানপাট

নিউজবাংলাকে তিনি জানান, তেলিভিটা গ্রামের বিভাষ কির্ত্তনীয়া সাতপাড় বাজারে মোটর গ্যারেজ ব্যবসায়ী করোনা উপসর্গ ঠান্ডা, কাশি ও জ্বর নিয়ে গত রোববার (২৩ মে) মারা যান। এরই জের ধরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলে তারা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানান। পরে ওই গ্রামের ৯১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা আরটিপিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

বুধবার এদের মধ্যে ২৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে। পরে তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। বুধবারই সকাল থেকে তেলিভিটা গ্রামসহ আশপাশের জনবহুল এলাকা বিশেষ লকডাউনের আওতায় আনা হয়।

এ ছাড়া গ্রামের আরও ৮৭ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এদের মধ্যে ২১ জনের করোনা ধরা পড়ে। এ নিয়ে একই গ্রামে এ পর্যন্ত ৪৪ জনের দেহে করোনা ধরা পড়েছে। আরও কতজন আক্রান্ত হয়েছেন সে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভারতীয় ধরন রয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য শুক্রবার ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমদ।

তিনি জানান, একটি মেডিক্যাল টিম ওই গ্রামে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা মানুষ খুঁজে বের করে নমুনা সংগ্রহ ও করণীয় সম্পর্কিত পরামর্শ দিচ্ছে।

তেলিভিটা গ্রামের মানুষ যাতে অন্যত্র যাতায়াত করতে না পারে, সে জন্য গান্ধিয়াশুর-তেলিভিটা ঘাটের খেয়া (নৌকা) চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রামের মানুষকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সাতপাড়, বৌলতলী, পাটকেলবাড়ী ও গান্ধিয়াশুর এলাকার হাটবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগামী সাত দিন বন্ধ রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

হিন্দু-অধ্যুষিত এই এলাকার মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বৈধ বা অবৈধভাবে ভারত গিয়ে থাকে। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ ভারতীয় ধরন বহন করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে। কেননা, এর আগে তিনজন করোনা রোগী ভারত থেকে সাতপাড়ে নিজ গ্রামে এসে ঘোরাফেরা করেছেন। প্রশাসন জানতে পেরে তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুর রহমান জানিয়েছেন, সাতপাড়, বৌলতলী ও সাহাপুর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাজার কমিটির নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে ওই এলাকার চারটি সাপ্তাহিক হাট, বাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তেলিভিটা গ্রামের মানুষ যাতে অন্যত্র চলাচল করতে না পারে, সে জন্য খেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রামপুলিশ ও বৌলতলী পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে ওই গ্রামের মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হতে না পারে। বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউনে থাকা তেলিভিটা গ্রামের ৭০টি পরিবারকে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে।

জেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৯ জন মারা গেছেন; সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৬১০ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩ জন এবং হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১২৮ জন।

এ বিভাগের আরো খবর