সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলায় ১৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৯ মাস পর ৩ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই নাজমুল হক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার চার্জশিট জমা দেন। করোনার কারণে নিয়মিত কোর্ট চালু না থাকায় দাখিলকৃত চার্জশিটের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো শুনানি হয়নি, তবে অপেক্ষমাণ রয়েছে।’
এনামুল হক বিজয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ২৬ জুন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় তাকে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব আহম্মেদ জিহাদ, একই কমিটির আরেক বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বিজয়, সাংগঠনিক সম্পাদক কামারখন্দের বাসিন্দা তারিকুজ্জামান লিয়ন, কামারখন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি পারভেজ রেজা পাভেল ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মামুন সেখ, কামারখন্দ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলামিন বাবু।
এ ছাড়া অভিযুক্তরা হলেন কামারখন্দ সদরের বাসিন্দা রাশেদ, একই উপজেলার বাড়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জুবায়ের, সিরাজগঞ্জ শহরের সয়াগোবিন্দ ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম, গয়লা বৌবাজার এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন, ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা সোহাগ ও দিয়ারধানগড়া মহল্লার বাসিন্দা শিশু সাগর।
ছাত্রলীগ নেতা বিজয় আহত হওয়ার পর তার বড় ভাই রুবেল সেখ বাদী হয়ে ২৭ জুন ছাত্রলীগের ৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। থানার এসআই আনিছুর রহমান মামলার তদন্ত শুরু করেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিজয় মারা গেলে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হন্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই বদরুদ্দোজা জিমেল। এ অবস্থায় নিহতের বাবা প্রথম মামলার এজাহারভুক্ত ৫ জনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে আদালতে পিটিশন মামলা করেন।
মামলার তদন্ত চলাকালে বদলিজনিত কারণে এসআই জিমেল অন্যত্র চলে যাওয়ায় ডিবি পুলিশের এসআই নাজমুল হক মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। উভয় মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হক।
প্রতিবেদনে তিনি আরও উল্লেখ্য করেছেন, চার্জশিটে থানায় জমা দেয়া বিজয়ের ভাইয়ের মামলার এজাহারভুক্ত ৫ জন, বাবার জমা দেয়া কোর্ট পিটিশনে যুক্ত হওয়া ৬ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ২ জন মিলে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
তবে এদের মধ্যে সাগর শিশু হওয়ায় তার বিচারকাজ শিশু আদালতে করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
এ ছাড়া নিহতের বাবার করা কোর্ট পিটিশনে আসামির তালিকায় থাকা ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা হলেন সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক যুবলীগ নেতা এমদাদ হোসেন এমদাদ।
এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বিজয়, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন, সয়াগোবিন্দ ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার জাহিদুল ইসলাম এবং দিয়ারধানগড়ার শিশু সাগর হাইকোর্ট থেকে নেয়া জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এখনও জেলহাজতে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব উদ্দিন জিহাদ। চার্জশিটভুক্ত অন্যরা কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি।