বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে বেশি যাত্রী: প্রতিবাদ করায় জানালা দিয়ে শিশুকে নিক্ষেপ

  •    
  • ২৮ মে, ২০২১ ১৪:০৮

‘বাসটার সুপারভাইজার এক সিট তো খালি রাহেই‌ না বরং যাত্রী তোল‌ছে দাঁড়া কইরা নেয়ার জন্য। আমি এর প্রতিবাদ করলে বাসের সুপারভাইজার, হেলপারসহ বাসস্ট্যান্ডের ১৫/২০ জন শ্রমিক মিল্লা বাসের সিটেই আমারে মারধর করে। আমারে বাঁচাইতে গেলে শ্রমিকরা আমার মা, ভাগনে-বৌ কারিমাকে মারধর করে। আমার ভাগনের সাত বছরের মাইয়া মুনিয়ারে জানালা দিয়া নিচে ফালাইয়া দেছে।’

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাসের প্রতি আসনেই যাত্রী, লোক তোলা হয় দাঁড়িয়েও। তবে ভাড়া নেয়া হচ্ছে বর্ধিত হারেই। আর এই অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অমানবিকতা দেখল একটি পরিবার।

সঙ্গে থাকা সাত বছরের মেয়েশিশুকে ছুড়ে ফেলা হলো জানালা দিয়ে। পরিবারটির বাকি তিন সদস্যকেও করা হয় মারধর।

শিশুটি ব্যথা পেলেও আঘাত গুরুতর ছিল না।

বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার চারজন হলেন মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা গ্রামের শামীম সিকদার, তার মা হাসনুর বেগম, ভাগনের স্ত্রী কারিমা ও কারিমার সাত বছরের মেয়ে মুনিয়া।

ভুক্তভোগীরা যা বলছেন

শামীম সিকদার বলেন, ‘২৬নং ওয়ার্ড কালিজিরায় বাসা আমার। মেইন বাড়ি মঠবাড়িয়ায়। আজ‌কে মঠবাড়িয়া যাই‌তে‌ছিলাম। এম‌নে সময়ে বরিশাল থেকে মঠবাড়িয়ার ভাড়া দেড় শ টাকা কইরা। কিন্তু করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মাইনা বাস চলাচল করায় ২৪০ টাকা কইরা ভাড়া দেই। মোরা চারজনেই ২৪০ টাকা কইরা টিকেট নিয়া সিটে বই‌ছিলাম। নিয়ম হই‌ছে, এক সিট খালি রাহা। কিন্তু ওই বাসটার সুপারভাইজার এক সিট তো খালি রাহেই‌ না বরং যাত্রী তোল‌ছে দাঁড়া কইরা নেয়ার জন্য।

‘আমি এর প্রতিবাদ করলে বাসের সুপারভাইজার, হেলপারসহ বাসস্ট্যান্ডের ১৫/২০ জন শ্রমিক মিল্লা বাসের সিটেই আমারে মারধর করে। আমারে বাঁচাইতে গেলে শ্রমিকরা আমার মা, ভাগনেবৌ কারিমাকে মারধর করে। শুধু আমাগো মারধর করছে সেটাই নয়, আমার ভাগনের সাত বছরের মাইয়া মুনিয়ারে জানালা দিয়া নিচে ফালাইয়া দেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির মাহিম পরিবহনের (গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো ব-১৪৪৯৯৮) সুপারভাইজার মুন্নার নেতৃত্বে ব্যাপক মারধর করা হয়।

যাত্রীদের মারধরে শুধু ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির শ্রমিকরাই নন, রূপাতলী বাসমালিক সমিতির শ্রমিকরাও অংশ নেন। সপরিবারে মারধরের পর তাদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়েই মঠবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও তারা ঘটনাটি দেখেনি বলে দাবি করেছেন।

ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

মিজান বলে পরিচয় দেয়া এক কনস্টেবল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আহত যাত্রীদের অভিযোগ শুইনা আমরা স্পটে গেছিলাম। কিন্তু বাস বা বাসের কাউকেই আমরা পাই নাই।’

বরিশাল কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি, বাসটিকেও পাওয়া যায়নি।’

পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন যা বলছে

রূপাতলী বাসমালিক সমিতির লাইনবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন শামীম বলেন, ‌‘আমি ঘটনা শুনেছি এবং মারধরের শিকার যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’

এ বিষয়ে ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রূপাতলী বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘যাত্রীর সাথে তর্কাতর্কি বাসস্ট্যান্ডে হলেও তাদের ওই বাসের শ্রমিকরা মারধর করেছেন স্ট্যান্ডের বাইরে সড়কে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির বাসশ্রমিকরা। আপনারা জানেন, তাদের কাছে বরিশালবাসী এক ধরনের জিম্মি। এই ঘটনার বিষয়ে ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির নেতাদের জানাতে পারব, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না। ব্যবস্থা নিলে ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতি রূপাতলী থেকে বাস সরিয়ে নিয়ে কালিজিরা স্ট্যান্ড করে।’

দেড় গুণ ভাড়ায় ঠাসা যাত্রী নিয়ে চলছে বাস

গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের শুরুতে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পরে প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী বহনের শর্তে চালু করা হয়। আর মালিক-শ্রমিকদের যেন লোকসান না হয়, সে জন্য ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়।

প্রথমে চালু করা হয় জেলার ভেতরে বাস। আর ঈদের পর আন্তজেলা বাসও চালু করা হয়।

আন্তজেলা বাস যখন বন্ধ ছিল, তখন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করে বাস রাস্তায় নামার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। কিন্তু যেদিন থেকে বাস চালু হয়, সেদিন থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও প্রতি আসনেই যাত্রী নেয়ার অভিযোগ আছে। শুরুতে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা না হলেও পরে দাঁড়িয়েও নেয়া হয়।

এ নিয়ে পুলিশ বা সড়ক পরিবহন সংস্থা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে- এর প্রমাণ নেই।

সম্প্রতি ব‌রিশাল মহানগর পুলিশের ট্রা‌ফিক বিভা‌গের উপক‌মিশনার জাকির আলম মজুমদারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘পু‌লিশের তদার‌কি রয়েছে। বিষয়‌টি খ‌তিয়ে দেখা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর