বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নদী ভাঙন: পাল্টে যাচ্ছে পিরোজপুরের মানচিত্র

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৮ মে, ২০২১ ১৩:০৫

জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘর প্লাবিত করে। তেমনি নদীর গর্ভে বিলীন হয় হাজারো ঘর-বাড়ি। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতি বর্ষণ ও জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধগুলো।

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের নদী ভাঙন ও বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে জেলার মানচিত্র। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সাইক্লোন, নদী ভাঙন, অতি বর্ষণ, জোয়ার ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধকে মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে জনপদটির লাখো মানুষকে।

বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদী পাড়ের শতশত মানুষ পানিতে ভাসছে, আবার পানিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছরই নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তাদের মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন। আবার দুর্যোগ কেটে গেলে নতুন করে বাঁধতে হয় ঘর।

পিরোজপুর জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কচা, কালীগঙ্গা, সন্ধ্যা ও বলেশ্বর নদীর পাড়ে বসবাস করে জেলে ও মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজারো পরিবারসহ ভূমিহীন মানুষ। ভরা জোয়ারে সারাবছর ভোগান্তি থাকলেও, বর্ষা মৌসুমে বেড়ে যায় তা কয়েকগুণ।

জোয়ারের পানি নদী থেকে প্রবেশ করে বাড়ি-ঘর প্লাবিত করে। তেমনি নদীর গর্ভে বিলীন হয় হাজারো ঘর-বাড়ি। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতি বর্ষণ ও জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধগুলো।

এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্বরূপকাঠী, কাউখালী, মঠবাড়িয়া ও পিরোজপুর সদরসহ নদী পাড়ের কয়েক লাখ মানুষ।

স্বরূপকাঠীর সন্ধ্যা নদীর পাড়ের বাসিন্দা হাছান সিকদার জানান, বিভিন্ন সময় বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন, আন্দোলন সংগ্রাম করেও ফল হয়নি। তাদের এলাকায় প্রায় ৩০ বছরে নদীতে সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে, কিংবা সরকারি সড়কের পাশে। শুধু ঘর-বাড়িই নয়, ঝুঁকিতে আছে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট।

কাউখালীর কালীগঙ্গা নদী পাড়ের মৃৎ শিল্পের কারিগর দিপীকা দাস তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বছরের পর বছর ধরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে বাস্তবে দেখিনি কোনো কার্যক্রম।’

স্থানীয় সামাজিক উন্নয়ন কর্মী মিঠুন হালদার জানান, দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে পিরোজপুরের কয়েকশ গ্রাম।

টেকসই, মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের কথা জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। বলেন, ‘বেড়িবাঁধের সঙ্গে নদী শাসন করা না হলে, শুধুমাত্র মাটির তৈরি বেড়িবাঁধ কোনো কাজেই আসবে না।’

নদী পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ড অচিরেই ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান স্থানীয়রা।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও আমফানের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার ও টানা বর্ষণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পিরোজপুরের ২৯২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে পিরোজপুর-স্বরূপকাঠি সড়কের আমরাজুড়ি ও সয়না রঘুনাথপুরের দুই পাড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস ও ঘরবাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, এরইমধ্যে বিলীন হয়েছে আমরাজুড়ি সার্কেল অফিস (রাজস্ব), আশোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন রোধে বারবার আবেদন জানালেও এগিয়ে আসেনি সরকারি কোনো সংস্থা।

সামাজিক আন্দোলনে নেতা আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কোনো সরকারই। যুগযুগ ধরে সন্ধ্যা ও কালীগঙ্গা ভাঙছে। প্রতিদিন এ জনপদের মাটি, স্থাপনা ও বৃক্ষরাজি নদীর করাল গ্রাসে চলে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর