পাবনা মানসিক হাসপাতালের ৯০ বিঘা জমি বেদখল হয়ে আছে। এরই মাঝে বিশ্বমানের হাসপাতাল গড়তে এখানে নেয়া হয়েছে বিশেষ প্রকল্প। জমির এ জটিলতায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রকল্প। জমি উদ্ধারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকলেও তার অগ্রগতি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য ১৯৫৭ সালে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশেষায়িত হাসপাতাল। সে সময় ৪১৩ বিঘা জমির মালিকানাসহ প্রতিষ্ঠিত হয় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা মানসিক হাসপাতাল। হাসপাতাল থেকে এই জমির খাজনা দেয়া হতো।
মানসিক হাসপাতালের জমি থেকে সরকারি নির্দেশনায় পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে দেয়া হয়েছে ৯৩ বিঘা জমি। অন্য কোথাও জমি হস্তান্তর না হলেও বর্তমানে পাবনা মানসিক হাসপাতাল নিজেদের দখলে থাকা ২৩০ বিঘা জমির খাজনা দিচ্ছে। রহস্যজনকভাবে বেহাত হয়ে গেছে ৯০ বিঘা জমি।
নানা সমস্যায় জর্জরিত পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিশ্বমানের হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বিশেষ টিম এ জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে। তখন কাগজপত্র যাচাই ও তথ্যানুসন্ধানে হাসপাতালটির ৯০ বিঘা জমি বেদখল হওয়ার ঘটনা জানা যায়। বেদখল ৯০ বিঘা জমি দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিক মকবুল হোসেন পাশা গত ২১ মার্চ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জমি বেদখলের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তিনি মানসিক হাসপাতালের ৯০ বিঘা জমি উদ্ধারসহ সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চান। তিনি আধুনিকায়ন প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্বমানের হাসপাতালে পরিণত হবে পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এখানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, হারিয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে মূলত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) যাচাই করবেন জমিসংক্রান্ত রেকর্ড। হারিয়ে যাওয়া জমি অন্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে আছে। বিষয়গুলো আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জমি উদ্ধারে সকল প্রকার সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে।
পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা বলেন, মানসিক হাসপাতালের জমি বিভিন্ন নামে রেকর্ড হয়েছে। এগুলো নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।
পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে যা লাগবে করা হবে। আমরা সব রকম সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল সাত্তার বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের জমির সমস্যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। তারপরই সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় জমি উদ্ধার করা হবে।