পুলিশের ইউনিফর্মে ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের গুণকীর্তন এবং রিসোর্টকাণ্ড নিয়ে সংবাদকর্মীদের সমালোচনা করার পর চাকরিচ্যুত এএসআই গোলাম রাব্বানী হ্যান্ডমাইক নিয়ে ‘জ্বালাময়ী’ বক্তৃতা দিয়েছেন।
গত বুধবার কুষ্টিয়া শহরে ওই বক্তব্য দেয়ার পর দিনাজপুর থেকে তার বাবা ও শ্বশুরকে ডেকে এনে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে জেলা পুলিশ।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় হ্যান্ডমাইক দিয়ে ৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড বক্তৃতা করেন তিনি।
বক্তৃতায় তিনি র্যাব-পুলিশের বিষোদগার করেন; নানা হুমকিও দেন। বলেন, দেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। এমনকি স্ত্রী, পুত্র-কন্যা সব বিসর্জন দিতেও রাজি।
এ সময় রাব্বানীকে দেখতে পথচারীরা ভিড় করেন। তার এমন আচরণ দেখে অনেকেই তাকে বিকারগ্রস্ত বলেন। এক পর্যায়ে সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায় তাকে নিবৃত্ত করতে। কিন্তু বক্তৃতা চালিয়ে যান তিনি। বক্তব্য ফেসবুকে লাইভ করার জন্য সবাইকে আহ্বানও জানান। এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তর্ক-বির্তক করেন।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৫ এপ্রিল পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় গোলাম রাব্বানীকে ফেসবুক ভিডিওতে দেখা যায়। তিনি সেই ভিডিওতে বলেন, মামুনুল হক হুজুরের একটি ভিডিও দেখলাম। যে ভিডিওতে দেখা যায়, স্ত্রীকে নিয়ে একটা রিসোর্টে গেছেন তিনি। অধিকাংশ সাংবাদিক সেখানে চিল্লাপাল্লা করে তার কাবিননামা দেখতে চাচ্ছে।
আমার প্রশ্ন- সাংবাদিককে এই অধিকার কে দিয়েছে। আপনি যে কাবিননামা দেখবেন, আপনাকে এই অধিকার কি রাষ্ট্র দিয়েছে? আমি তো পুলিশের চাকরি করি, আমার জানা নাই। ভণ্ডামির একটা সীমা আছে। যদি স্ত্রী ব্যতীত অন্য কাউকে নিয়ে যেত, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতো। মিডিয়ার মাধ্যমে এমন একটা আলেম মানুষকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ধরনের হেনস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সে সময় তিনি কুষ্টিয়া পুলিশের ইন-সার্ভিস সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। আলোচিত ওই ফেসবুক লাইভের পর তাকে কুষ্টিয়ার ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পরে তার ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, তদন্ত কমিটিকে নিজের অবস্থান থেকে একটুও সরবেন না বলে জানান রব্বানী। তিনি সঠিক বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করেন। পুলিশ সুপার আরও জানান, পুলিশ একটি ডিসিপ্লিন্ড সংস্থা। নির্দিষ্ট নিয়মে এ বাহিনীকে চলতে হয়। সেখানে রব্বানী এই ধরনের বাহিনীতে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি জানান, নানাভাবে রব্বানীকে শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাকে গত ২৩ মে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, রাব্বানীর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। তিনি কুষ্টিয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে থাকতেন। চাকরিচ্যুতির পরও তাদের সঙ্গেই ছিলেন; ছিলেন জেলা পুলিশের নজরদারিতেও।
পুলিশ কর্মকর্তা খাইরুল জানান, বুধবার শহরের প্রাণকেন্দ্রে হ্যান্ডমাইক নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর তাকে কুষ্টিায় মডেল থানায় নেয়া হয়। এরপর দিনাজপুরে তার বাবা ও শ্বশুরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের খবর দেয়া হয় তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাব্বানী যাতে রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তা না বলেন সেটা নিশ্চিতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পরিবারের সদস্যদের।
তারা রাব্বানীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনাজপুর পৌঁছেছেন বলেও জানান কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার।