৯৯৯ এ ফোনে গোলযোগের খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার দাবি করেছেন পুলিশ সদস্যরা। যদিও যাদের আটক করা হয়েছে, তারা দাবি করছেন, তর্কাতর্কি হয়েছে, হামলা নয়।
বরিশালের ২১নং ওয়ার্ডের মানু মিয়ার গলিতে বৃহস্পতিবার বিকালে এই ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের একটি দলের ওপর এলাকার কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা মিলে এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ পুলিশের।
এ সময় পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ও সহকারী উপ পরিদর্শক মিজানুর রহমান আহত হন। তাদের মোবাইলও ছিনিয়ে নেয়া হয়।
যেভাবে ঘটনা
ওই এলাকার একটি জায়গা নিয়ে নিক্কন বিশ্বাস ও বিলাস বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।
সেই জমিতে নিক্কন স্থাপনা করতে গেলে বিলাস ৯৯৯ এ কল করে অভিযোগ জানান।
এরপর ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন একটি দলসহ উপস্থিত হন।
সে সময় নিক্কনের পক্ষে অবস্থান নেন ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না। পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন কেনো সেখানে উপস্থিত হয়েছেন তার কৈফিয়ত চান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য ও কাউন্সিলরের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হলে পুলিশ সদস্যদের গালাগাল করেন কাউন্সিলর।
সে সময় উপস্থিত জনতা বার বার কাউন্সিলরকে বোঝানোর চেষ্টা করলে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারকে চলে যেতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
তখন মান্না ঘটনাস্থল থেকে সটকে পরেন। আর তার পাঁচ সহযোগীকে আটক করে পুলিশ।
এরপর পুলিশের একটি দল কাউন্সিলর মান্নাকে আটক করতে তার কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হলেও মাঝপথে গিয়ে ফিরে আসে।
দুই পক্ষের যে দাবি
বিলাস বিশ্বাস বলেন, ওই জায়গায় তারা ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। তার কাকা বিমল বিশ্বাসের কাছ থেকে দেড় শতাংশ জমি কিনতে বায়না করেন। এর মধ্যে বিমল বিশ্বাসের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকাররা দলিল করে দিচ্ছেন না।
এর মধ্যে বিমলের ছেলে নিক্কন ও তার লোকজন বিলাসের বাড়ি ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিলাসের অভিযোগ, গত ২৪ মে ইট, বালু এনে তার ঘরের পাশে জড়ো নতুন করে স্থাপনা করার চেষ্টা চালায় তার জমিতে। তখন তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
সকালে তারা আবার কাজ শুরু করলে তিনি থানায় খবর দেন। এরপর নিক্কনের পক্ষে আসেন কাউন্সিলর মান্না।
‘পুলিশ আর মান্না ভাইয়ে মধ্যে ঝামেলা হেইছে। কাউন্সিলর সাহেব পুলিশকে গালাগাল করে মোবাইল নিয়ে যায় ছিনাইয়া’-বলেন বিলাস।
ঘটনাস্থলে গিয়ে নিক্কনকে পাওয়া যায়নি। তার মা বানী বিশ্বাস বলেন, ‘হেই জমিটা মোগো। আমার স্বামী ওগো থাকতে দেছিল। কাউন্সিলর মোগো কাগজ দেইখ্যা কইছিল, মোরা যদি ওগো থাকতে দেই তাইলে থাকতে পারবে।
‘কিন্তু বৃষ্টি অইলে মোগো ঘরে পানি উডে। বিষয়ডা ভাইব্যা কাউন্সিলর ওগো তিন দিন সময় দিছিল রান্না ঘর ভাইঙা ফেলার লাইগ্যা। ওই হানে জায়গাটা উচা কইরা থাকমু মোরা।
‘তিন দিন পার অইয়া গেলেও ওরা না ভাঙায় কাউন্সিলর লোক পাডায় ভাঙার লাইগ্যা। মোগোও ওইহানে কাম করতে কয়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর বিলাসরা নানা জায়গায় নালিশ দেছে, পুলিশ আনছে। আজকে আমরা কাম করার সময় ওরা বাধা দেলে কাউন্সিলর মান্নারে জানেইন্যা অয়। হে এইহানে পুলিশের লগে কতা কাডাকাডি অয়।’
পুলিশ যা বলছে
বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ‘৯৯৯ এ কল পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিলাম।এর মধ্যে কাউন্সিলর মান্না এসে আমাদের তুই তুকারি শুরু করে মারতে উদ্যত হয় এবং পরিদর্শক স্যারের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
‘এখানে আমরা বাজে পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম, আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।’
পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন ২) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে প্রথমে একজন সাব ইন্সপেক্টর পাঠানো হয় ঝামেলার কথা শুনে। পরে আমি আসি।
‘অভিযোগ ছিল, এখানে অবৈধভাবে একজনের বাসা উচ্ছেদ করা হচ্ছিল। ঘটনাটা বোঝার জন্য দুই পক্ষকে ডেকে কথা বলছিলাম। এরই মধ্যে কাউন্সিলর মান্না তার বাহিনী নিয়ে এসে আমার উপর আক্রমণ করে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
‘আমাকে বলছে তুই এখানে কেন আসছোস, এই বরিশাল আমার এলাকা আমার, তুই কেডা তোর পোশাক খুলে নিয়া যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে এভাবে চরম অপমান অপদস্তও করেছে। আমাদের আক্রমণ করতে আসার সময় পাঁচ জনকে আটক করেছি। বাকিদেরকেও আটকের চেষ্টা চলছে।’
আটকদের যে বক্তব্য
এই ঘটনার বিষয়ে জানতে ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্নার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
তবে যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন, তারা সকাল থেকেই এখানে রয়েছেন যাতে দুই পক্ষে ঝামেলা না হয়।
একজন বলেন, বিলাস এখানে অনেকদিন ধরে থাকেন। তিনি কাউন্সিলর অফিসে অভিযোগ দেয়ার পর নিক্কনকে ডাকা হয়। কিন্তু দেখা যায়, ওই জমির কাগজ নিক্কনের নামে রয়েছে।
তবে পুলিশ সদস্যের গায়ে দেয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তারা।