অভিযোগ ছিল, কথিত মীমাংসার জন্য থানায় ডেকে সাড়া না পাওয়ায় শুরু করেছিলেন আটক-বাণিজ্য। ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে গিয়েছিল সাত গ্রাম।
এবার গণমাধ্যমের কাছে ওই ঘটনা জানানোয় একজনকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাসের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি করেছেন ৭০ বছর বয়সী সাইফুদ্দিন প্রামাণিক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ মাস আগে উল্লাপাড়ার বেতবাড়ী গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীদের থানায় আসতে বলেন ওসি দীপক কুমার দাস। তবে রাতে বিবাদীরা থানায় না আসার কারণে ক্ষিপ্ত হন তিনি।
এজাহারে বলা হয়েছে, এর জেরে প্রতি রাতে পুলিশি অভিযানের নামে পুরো গ্রাম তছনছ করাসহ হয়রানির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় শুরু করে পুলিশ। চাহিদামতো টাকা না দিলে বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরসহ লুটপাট করা হয়। মামলা ছাড়াই একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এজাহারে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের এই নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি দীপক। পরে সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের একে একে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নতুন নতুন মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাতে থাকেন।
আরও পড়ুন: ওসির ডাকে সাড়া না দেয়ায় পুরুষশূন্য গ্রাম
মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে আমি সাংবাদিকদের কাছে পুলিশি হয়রানির কথা বলেছিলাম। এটাই আমার অপরাধ। তাই সোমবার রাতে উল্লাপাড়া থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সাদাপোশাকে এসে আমাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে দুই এসআই হাত ধরে রাখে এবং ওসি নিজে ব্যাপক হারে মারতে থাকে আর বলে তোকে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সাধ মিটাই আগে। লোহার পাইপ দিয়ে আমাকে ইচ্ছামতো পেটায় ওসি।
‘আমি ওসিকে বলি, আমি আপনার বাবার বয়সের, আমাকে আর মারবেন না। তিনি কোনো কথা না শুনে আমাকে মারধর করতে থাকেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে রাতেই উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওসির নির্যাতনে আমার দুই হাতের তালু, মাথায়, ডান হাতে, গলার পেছনে, তলপেটে, পিঠে, দুই কানে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
‘মঙ্গলবার তারা আমাকে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়। আমার অবস্থা দেখে আদালত জামিন দেন এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটু সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট তুলে বৃহস্পতিবার উল্লাপাড়ার আমলি আদালতে হাজির হয়ে মামলা করি।’
এসব বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ওসি দীপক কুমার দাস বলেন, ‘সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক আগের একটা মামলা ছিল। তাকে সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি কিংবা আমার কোনো পুলিশ তাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেনি। আদালত তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বের হয়ে আসবে।’