ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনায় ৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি পয়েন্টে প্রায় ৭০০ মিটার বাঁধ বিলীন হয়ে লোকালয়ে লোনা পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধশত গ্রামের মানুষ।
এ ছাড়া ভেঙে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর। পুকুর ও মৎস্যঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ শাখা জানিয়েছে, খুলনার চার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৪০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও দুই হাজার বাড়িঘর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, খুলনার প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি পয়েন্টে প্রায় ৭০০ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করেছে।
সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা উপজেলা। এই উপজেলার দশহালিয়া, পবনা, মঠবাড়িয়া, মেদেরচর, গাতিরঘেরি ও পদ্মপুকুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে।
গত মঙ্গল ও বুধবার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা, পবনাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন বাঁধ মেরামত করলেও বৃহস্পতিবারের জোয়ারে আবার তা ভেঙে গেছে।
কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ির পবনা, দশহালিয়া ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাতিরঘেরি এলাকার বাঁধ এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তবে দক্ষিণ বেদকাশী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া বাঁধ কোনো রকমে বাঁধা হয়েছে। তবে এখানে জরুরি ভিত্তিতে আরও সংস্কার প্রয়োজন।
কয়রা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আলউদ্দিন আহমেদ জানান, ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে উপজেলায় ২ হাজার ১০০ মৎস্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া মাছের অসংখ্য পুকুর ডুবে গেছে। মৎস্য খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ফসল নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদেরও সহযোগিতার আওতায় আনা হবে।
এ ছাড়া খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা এলাকা, ঝালবুনিয়া, কামিনীবাসিয়া এবং পাইকগাছার সোলাদানা ও লতা ইউনিয়নের ২০০ মিটার বাঁধ বিলীন হয়ে লোকালয়ে ঢুকেছে পানি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলা এলাকার বাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘কয়রা উপজেলায় ১১৯ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে ৫০০ মিটার।
‘কিছু এলাকায় বাঁধ এরই মধ্যে মেরামত করা হয়েছে। জোয়ারের চাপ কমলে আরও কিছু জায়গায় মেরামত করা হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা ১ ও ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, এখন পর্যন্ত দাকোপের বানিশান্তা এলাকায় বাঁধ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। পানি আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় পোল্ডারগুলোতে ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে।