সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে শাল্লায় যাওয়ার জন্য রয়েছে ১৯ কিলোমিটারের একটি সড়ক। এই পথ পাড়ি দিতে ভোগান্তির কোনো শেষ নেই এলাকাবাসীর।
জেলা সদর থেকে শাল্লা যাওয়ার এই একমাত্র রাস্তার বেশির ভাগ জায়গাতেই নেই পিচ, জায়গায় জায়গায় দুই ধার ভেঙে গেছে, ব্রিজ ও কালভার্টগুলো সংযুক্ত করা হয়নি সড়কের সঙ্গে।
কোনো গাড়ি নিয়ে এই সড়ক পার হওয়ার উপায় নেই। বর্ষাকালে এটি হয়ে ওঠে আরও বিপজ্জনক।
২০১০ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প শুরু হয়। সুনামগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সড়কের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। কিন্তু ২০১৭ সালে ‘অসমাপ্ত প্রকল্প’ হিসেবে এর কাজ শেষ হয়ে যায়।
প্রকল্পের ৬০ ভাগ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। ১১টি ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি শেষ হলেও এগুলোর সঙ্গে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। তার ওপর টানা তিনবারের বন্যায় সড়কটির অবস্থা আরও বেহাল হয়েছে।
১১০ কোটি টাকা বরাদ্দের পর এমন সড়ক পেয়ে হতাশ এলাকাবাসী। যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তিতে দিন পার করছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা থেকে সড়কটিকে রক্ষা করতে ইচ্ছামতো ব্লক ফেলা হয়। কোনো কোনো জায়গায় শুধু মাটি ভরাট করা হয়েছে, দেয়া হয়নি কোনো পিচ। ২০২০ সালের বন্যার পর এই সড়ক একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শাল্লার আনন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল হইছে, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা উন্নত হইছে। তো আমরার উপজেলা কিতা দোষ করছে? সুরঞ্জিত দাদার স্বপ্নের সড়ক আছিল এটা, কিন্তু এইটা তারা যেমন মন চায় তেমনে বানাইয়া দিয়া গেছে।
‘আমরার স্বপ্ন আছিল এই রাস্তা অইবো, আমরা দিরাই যাইমু গাড়ি দিয়া। এরা আমরারে মোটরসাইকেল চালানির রাস্তা কইরা দিয়া গেছে কিন্তু ইটাও ভাঙা। সরকারের সব টাকা ইলান নষ্ট যারা করছে, এরারে শাস্তির আওতায় লইয়া আওয়া হউক।’
ধামপুর গ্রামের রফিক আহমেদ জানান, ভোট এলেই তাদের আশ্বাস দেয়া হয় রাস্তাঘাট করা হবে। কিন্তু ভোট চলে গেলে এগুলো মনে থাকে না। ২০১৭ সালে উপনির্বাচনের সময় এমপি জয়া সেন শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন দিরাই-শাল্লার উন্নয়নে স্বামীর অসমাপ্ত কাজ তিনি সমাপ্ত করবেন।
তিনি বলেন, ‘উপনির্বাচনের পর পুনরায় তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত শাল্লায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাহলে আমরা কেন উনাকে ভোট দিলাম?’
শাল্লা বাজার এলাকার রুমন দাস বলেন, ‘হরিলুট হইছে আর এই হরিলুটের টাকা প্রশাসনের কর্মকর্তা থাকি শুরু করি সবার পকেটে ডুকসে। নাইলে ১০০ কোটি টাকার উপরের কাম কিন্তু রাস্তা কই?’
উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, এই সড়কের কাজ বাস্তবায়নের জন্য তিনি এমপির সঙ্গে আলোচনা করবেন। তার আশা, অচিরেই একনেকে দিরাই-শাল্লা সড়কের প্রকল্প অনুমোদন পাবে।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের এমপি জয়া সেনগুপ্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পুনরায় অনুমোদনের জন্য একনেকের সভায় প্রস্তাব পাঠানো হবে। আশা করি তা দ্রুতই অনুমোদন পাবে। এ সড়ক তৈরি করা ছিল আমার স্বামীর স্বপ্ন। আমি ওনার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।’
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান জানান, ২০১৮ সালের বন্যায় দিরাই-শাল্লা সংশ্লিষ্ট সড়ক বাঁধের বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
তবে কারা এই কাজের ঠিকাদারি পেয়েছিল ও কেন প্রকল্প শেষ হলো না সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তখন তিনি এই জেলায় কর্মরত ছিলেন না।