বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাগলকে ইউএনওর জরিমানা

  •    
  • ২৬ মে, ২০২১ ২০:৩৫

সাহারা বেগমের ছাগলের খোঁজ মিলছিল না ১৭ মে থেকে। পরে তিনি জানতে পারেন, ইউএনও সেই প্রাণীটিকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে আটকে রেখেছেন। তাকে সেই টাকা পরিশোধ করে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি টাকা দেননি। আর ৯ দিন পর তার ছাগল ইউএনওর আদেশে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের ফুলগাছ খেয়েছে ছাগল। রাগে লাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রয়োগ করলেন তার বিচারিক ক্ষমতা। জরিমানা করলেন ছাগলকে। দিতে হবে দুই হাজার টাকা।

ছাগলের মালিক তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পশুর পক্ষে তো জরিমানা দেয়া সম্ভব নয়। তাই মালিককে চাপ দিতে আটক করা হয় সেই ছাগল।

৯ দিন আটকে রাখার পর মালিক সাহারা বেগমকে না জানিয়ে ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিন।

তবে আইনত তিনি এই আদেশ দিতে পারেন কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আদেশ দিতে হলে অভিযুক্তের অপরাধ স্বীকার করার বাধ্যবাধকতা আছে।

যা বললেন ছাগলমালিক

ছাগলমালিক সাহারা বেগম আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলোসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান।

গত ১৭ মে তার ছাগলটি হারিয়ে যায়। অনেক জায়গায় তিনি ছাগলটির সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানান, ছাগলটি ইউএনওর এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে রয়েছে।

তিনি ইউএনওর বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এ সময় ছাগল ফেরত চাইলে দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ওই নিরাপত্তাকর্মী।পরে তিনি ইউএনওর কাছে গেলে তিনি তাকে বলেন, ‘ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান।’

কিন্তু ছাগল ফুলগাছ খাবে- এ জন্য দুই হাজার টাকা দিতে হবে, এটা মানতেই পারেননি সাহারা বেগম। টাকা দিচ্ছিলেন না তিনি।

এর মধ্যে ইউএনওর গৃহকর্মী হঠাৎ তাকে ডাকেন টাকা নিয়ে আসতে। তখন আক্কেলগুড়ুম দশা সাহারা বেগমের। কেন তাকে টাকা দেবেন?

সেই গৃহকর্মীর কাছেও তিনি রাখেন প্রশ্ন।

পরে তাকে জানানো হয়, ২২ মে তার ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বেচে দেয়া হয়েছে। এ থেকে জরিমানা বাবদ দুই হাজার টাকা কেটে রাখা হয়েছে। বাকি টাকা যেন নিয়ে আসেন।

তবে সাহারা বেগম সেই টাকা আর আনেননি। আর ইউএনও দাবি করেছেন, ছাগল বিক্রি করা হয়নি। একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছে।

ইউএনও যা বলছেন

সীমা শারমিনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে নিউজবাংলার।

তিনি জানান, উপজেলা চত্বরে একটি পার্ক করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলের গাছ নিয়ে এসে লাগানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ওই ছাগল এসে গাছের ফুলগুলো খেয়ে নিয়েছে কয়েকবার।

ইউএনও সীমা শারমিন

‘এ বিষয়ে ছাগলের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু উনি কথা শোনেননি। এ কারণে গণ-উপদ্রব আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ছাগল বেচে দেয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‌‘ছাগল বিক্রি করা হয়নি। একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। মালিক চাইলে টাকার বিনিময়ে ছাগল ফেরত পাবেন।’

অবৈধ জরিমানা, বললেন আইনজীবী নেতা

ছাগলের মালিকের অনুপস্থিতিতে এভাবে জরিমানা করা যায় কি না, জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ‌‘‌ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইনমতে, অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ স্বীকার করতে হবে। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান বা সম্পদের (ছাগল) মালিকের বিরুদ্ধে এভাবে জরিমানা করা ঠিক হয়নি। এই ঘটনায় প্রচলিত বৈধ রীতি খোঁয়াড়ে ছাগল রাখতে পারতেন। অথবা বেশি ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে পারেন।’

এ বিভাগের আরো খবর