ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলীয় জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে ছয় ফুট বেশি উচ্চতার প্লাবন হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে পানি ঢুকেছে।
ঢেউয়ের তোড়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জিরো পয়েন্টে অস্থায়ী জেলেপল্লির একাংশ সাগরে বিলীন হয়েছে। একই সঙ্গে ভেঙেছে ‘হোটেল কিংস’ নামের একটি আবাসিক হোটেলের সামনের অংশ।
সৈকতের অন্তত ১৫টি দোকান ঢেউয়ে ভেঙে গেছে।
পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার নিউজবাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
জোয়ারে কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের অরক্ষিত বাঁধ ভেঙে অন্তত পাঁচটি গ্রাম বুধবার প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মো. শহিদুল হক।
পিরোজপুরের নদীগুলোতে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কচা, সন্ধ্যা, বলেশ্বর ও কালীগঙ্গা নদীর জোয়ারের পানিতে কয়েক শ গ্রামে পানি ঢুকেছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চর ও ইন্দুরকানি উপজেলায় বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয়ের বাড়িঘর, দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
বুধবার জেলার টগরা গ্রাম ও মাঝের চর গ্রামের প্রায় আট কিলোমিটার বাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেছে।
সেখানকার বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। দুই বছর আগে এই বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। গত বছরও আম্পানে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সাতক্ষীরায় বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর পানি তিন থেকে চার ফুট বেড়ে যাওয়ায় শ্যামনগর ও আশাশুনির কয়েকটি স্থানে বেঁড়িবাধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার আগাম ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তাদের বহনযোগ্য সম্পদ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিখার আলী রিপন জানান, ইয়াস দুপুরের দিকে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করবে। তখন এটির গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।
তিনি আরও জানান, উপকূলীয় এলাকায় বর্তমানে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীর পানিও জোয়ারের কারণে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানির তোড়ে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১৫ গ্রাম।
উপজেলা পরিষদ ও কাঁঠালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বিষখালী তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙে পানিতে বসতঘর ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ জেলার প্রধান যে তিনটি নদীর পানি ইতিমধ্যে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
বুধবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
ব্যাপক বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাস নিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এরই মধ্যে ভারতের ওড়িশা রাজ্যে আঘাত হেনেছে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৯টার কিছু পরই ওড়িশায় আছড়ে পড়তে থাকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ওড়িশার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে ইয়াসের আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওড়িশায় আঘাত হানার আগেই সকাল থেকে ঝড়ের প্রভাব পড়ে দেশের উপকূলে।