বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিষেধাজ্ঞাই আশীর্বাদ, নিরাপদে জেলেরা

  •    
  • ২৬ মে, ২০২১ ১০:৪২

‘সরকার নিষুদ (নিষেধ) করছে হেইতে গেদুর বাফে এইবার সাগরে যায় নাই। যদি মাছ ধরার সুযোগ থাকত, হেইলে তো হে সাগরে যাইয়া বইন্নায় ডুইব্বা মরতে। নাইলে মোর ভাশুরের নাহান নিখোঁজ অইয়া আর ফেরতে না।’

বরগুনার পাথরঘাটার বাদুরতলা গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান। ২০০৭ সালে সিডরের সময় তিনি মাছ ধরতে গিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরে। সেই ঝড় থেমেছে ১৪ বছর হয়ে গেল। কিন্তু খলিল আর ফেরেননি।

তিন সন্তান নিয়ে স্ত্রী কমলা বেগম এখনও তার ফেরার অপেক্ষায়। সাগরে ডুবে সে সময়ই মারা গেছেন খলিল। তারপরও অপেক্ষা তাকে কিছুটা সাহস দেয়।

ঝড়ের মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে বিভিন্ন সময় সাগরে নিখোঁজ হয়েছেন খলিলের মতো অনেক জেলে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও জেলেরা সাগরে যান। তবে এবার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব। এ কারণে বেশ সতর্ক হয়েছেন জেলেরা। তাতে পরিবারগুলো কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। প্রিয়জনকে সাগরে হারানোর ভয় এবার নেই তাদের।

সামু‌দ্রিক মা‌ছের প্রজনন ও সংরক্ষণে ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।

উপকূলীয় ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী জানান, ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ ঝড়ে প্রায় আড়াই হাজার জেলের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে পাথরঘাটারই ১৭৬ জন জেলে নিখোঁজ হন।

কিন্তু এবারই প্রথম সরকারের আরোপ করা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিনের মধ্যে এসেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

তাই তীরেই অবস্থান করছেন জেলেরা। যার ফলে ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ও প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেয়েছেন তারা।

জেলে সমিতির সভাপতি দুলাল মাঝি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা মোগো লইগ্গা আশীর্বাদ হইছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞায় কোনো জাইল্লা (জেলে) বোট লইয়া সাগরে যায় নায়। হেইয়ার লইগ্গা মোরা নিশ্চিন্তে বাড়তে (বাড়ি) থাকতে পারতেছি।’

পাথরঘাাটা সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা এলাকার জেলে হানিফ। স্ত্রী ও তিনি সন্তান নিয়ে তার পরিবার।

স্ত্রী আয়েশা বলেন, ‘সরকার নিষুদ (নিষেধ) করছে হেইতে গেদুর বাফে এইবার সাগরে যায় নাই। যদি মাছ ধরার সুযোগ থাকত, হেইলে তো হে সাগরে যাইয়া বইন্নায় ডুইব্বা মরতে। নাইলে মোর ভাশুরের নাহান নিখোঁজ অইয়া আর ফেরতে না।’

হানিফের বড় ভাই ইলিয়াস সিডরে নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাকে ফিরে পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছে পরিবার।

একই এলাকার জেলেবধূ কল্পনা বেগম বলেন, ‘হ্যারা সাগরে গ্যালে মোগো পড়ানডা ছাতছাত (ধড়ফড়) করে। দাবি দয়া ছাড়াইয়াই হেরা সাগরে যায়। এমন জাগায় মাছ ধরতে যায় যে ফোনে এট্টু কতা কমু হেইয়াও পারি না, নেটওয়্যারে (নেটওয়ার্ক) থাহে না। এই ফির সরকারের নিষেধের কারণে যায় নায়, নাইলে মোর স্বামীরে খুয়াইলহাম।’

পাথরঘাটার স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের পরিচালক মীর্জা এস. আই. খালেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় জেলেপল্লিগুলোতে কান্নার রোল পড়ে যায়। নানা শঙ্কা আর দুশ্চিন্তায় দিন পার করেন জেলেদের স্ত্রী-সন্তান। কিন্তু এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় জেলেরা বাড়িতে অবস্থান করছেন।’

তিনি জানান, পাথরঘাটায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ সাগরে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

কোস্টগার্ড পাথরঘাটা স্টেশনের কমান্ডার লে. ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, ‘২০ মে থেকে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। যে কারণে এ সময় সাগরে কোনো জেলে ট্রলার নেই। আর নিষেধাজ্ঞার কারণেই জেলেরা এই ঝড়ের সময় নিরাপদে পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর