ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও বরিশাল বিভাগের ১৫টি উপজেলা বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব উপজেলা নদীবেষ্টিত বা সাগরপারে হওয়ায় ইয়াসের আঘাতে এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে বরিশালে ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে ।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বরগুনা জেলার সদর উপজেলা, তালতলী ও পাথরঘাটা এলাকায় ঝুঁকি বেশি রয়েছে। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে এসব এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, এই জেলার ৫০০ কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা ১৩ ফুট। তবে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে এই বাঁধ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির আলম মিরাজ বলেন, নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তবে সিডর ও আইলায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেগুলো ঠিকমতো মেরামত করা হয়নি।
যে কারণে এবারে বিশেষ করে বরগুনার তিন উপজেলা বেশ হুমকির মধ্যে রয়েছে ।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও কলাপাড়া সবচেয়ে বেশির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন সেখানকার গণমাধ্যমকর্মীরা। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পটুয়াখালীর এই তিন উপজেলায়। এর মধ্যে আবার রাঙ্গাবালী সবচেয়ে ভয়ানক এলাকা। সেখানে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রও নেই।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভোলা উপকূলে আঘাত হানলে জেলার পাঁচ উপজেলার ৪০টি চর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই জেলায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে মনপুরা, দৌলতখান, ভোলা সদর, তজুমদ্দিন এবং চরফ্যাশন উপজেলা। এই পাঁচ উপজেলার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি, চর নিজাম, চর পাতিলা, চর জহির উদ্দিন, চর মোজাম্মেল, মদনপুর, মাঝের চর, মুজিবনগর, চর কচুয়াখালীসহ ৪০টি চর জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। তিনি জানান, এই ৪০টি চরের ৩ লাখ ১৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে আনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
পিরোজপুরে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা ধরা হচ্ছে কাউখালীকে। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার অনেকের ঘরেই পানি উঠে গেছে।
বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা প্রমত্তা মেঘনা, কালাবদর নদীবেষ্টিত এবং বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোতে এই দুই এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি ছিল। তাই এই দুই উপজেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেছেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে আমাদের ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।’
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, ইয়াস মোকাবিলায় সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ ই জাবেদ বলেন, বরগুনাতে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার, বেতাগীতে ৮ সেন্টিমিটার ও পাথরঘাটায় ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কচা নদীর পিরোজপুরের উমেদপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, মির্জাগঞ্জে বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীসহ আশপাশের এলাকার সব নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
ইয়াসের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে বরিশালে হালকা ও দমকা হাওয়ার পাশাপাশি থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যা কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বরিশাল আবহাওয়া দপ্তর।
এই প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বরগুনার রুদ্র রোহান, ভোলার আদিল হোসেন, ঝালকাঠির হাসনাইন তালুকদার দিবস ও পটুয়াখালীর জাকারিয়া হৃদয়।