ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে পটুয়াখালী শহরে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলও।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সাহেলী।
তিনি জানান, সংস্কার করা একাধিক বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত গ্রামের সঠিক সংখ্যা এই মুহূর্তে তিনি বলতে পারছেন না।
এদিকে ঝুঁকি এড়াতে সরকারি নির্দেশের পর পটুয়াখালী থেকে সারা দেশের সঙ্গে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের নৌযান চলতে দেয়া হবে না।’
জেলার কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জেলার নিম্নাঞ্চলে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এর মধ্যে রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার ৯টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত শহিদুল হক জানান, উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ২-৩টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই সব গ্রামের মানুষ।
বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল। ছবি: নিউজবাংলারাঙ্গাবালীর ইউএনও মাসফাকুর রহমান জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের সব নিম্নাঞ্চল, চরাঞ্চলসহ সাতটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া চর মোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডারভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক মানুষ।
তিনি জানান, ওই সব এলাকার মানুষের রান্নাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা।
চর মোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফ মিয়া জানান, পুকুর ও ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, বাতাস ও জোয়ারের পানির চাপে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধের বাইরে ঝিনুক ও শুঁটকির প্রায় ৪০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরায় লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের পানি। ছবি: নিউজবাংলাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সালেহী জানান, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩৪১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সম্পূর্ণ খোলা রয়েছে ১০ কিলোমিটার। প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৮ কিলোমিটার এবং ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৪৫ কিলোমিটার।
জেলা আবহাওয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, বেলা ৩টা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার। একই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ। বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২ মিলিমিটার।
ভোলায় পানিবন্দি দুই হাজার মানুষ ইয়াসের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কুকরী-মুকরি, ঢালচর, চরপাতিলাসহ বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত দুই হাজার মানুষ।ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানান, নদী ও সাগর উত্তাল রয়েছে। জেয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো ইউনিয়ন। এতে প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কুকরী-মুকরি ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানিয়েছেন, অতি জোয়ারে পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, মাছের ঘেরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তলিয়ে গেছে।ইতিমধ্যে ইয়াসের আঘাত থেকে মানুষের জীবন ও প্রাণিসম্পদ রক্ষায় জেলার ৭০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ৩৫টি মুজিব কেল্লা তৈরি রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী।
এ ছাড়া জেলার ৪০টি দ্বীপচরকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেখানকার তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জোয়ারে পানি বেড়েছে সুন্দরবনের নদীতে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। সুন্দরবনের পাশের নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বেড়েছে তিন থেকে চার ফুট।
উপকূল এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, কাশিমারিসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সীগঞ্জ হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেড়িবাঁধের ৪০টি পয়েন্ট খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় ইয়াসে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী। এতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে সয়লাব হতে পারে জনপদ।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের আটটি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহকারি বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, ‘ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হলে তাদের উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’