বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি

  •    
  • ২৫ মে, ২০২১ ১৭:৪৯

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, ‘জেলার ৬৫ স্থানের প্রায় ২৯ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৫-১৮ ফুটের বেশি পানি বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের বাঁধগুলোর উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৬ ফুট।’

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আর পূর্ণিমার প্রভাবে বরগুনার পায়রা, বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর পানির বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কিছু নাজুক বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশতাধিক এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এই জেলার বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ইয়াস-এর সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারের মুখে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানির উচ্চতা পরিমাপক মাহতাব উদ্দীন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বরগুনার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভাঙা বাঁধ ও নিচু বাঁধ উপচে জেলার অর্ধশতাধিক এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনায় সোমবার মধ্যরাত থেকেই থেমে থেমে দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের রিংবাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে দেখা যায়।

সেখানে অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে একটি গরু।

পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরবর্তী পদ্মা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। এতে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী, ডালভাঙা ও নলী; নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, সোনাতল ও কুমিড়মারা; বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া, বাঁশবুনিয়া, চালিতাতলী ও আয়লা; পাতাকাটা ইউনিয়ন; বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি, কুমড়াখালী ও গুলিশাখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।

একই অবস্থা পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জীনতলা, টেংরা, কালমেঘা ও কাকচিড়া; তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ছোটবগী, নিদ্রার চর, তেঁতুলবাড়িয়া, খোট্টার চর, সোনাকাটা ও নিউপাড়া; আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও গুলিশাখালী, বামনা উপজেলার রামনা ও বদনীখালী এবং বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি, ঝিলবুনিয়া ও ছোট মোকামিয়াসহ জেলার বেশ কিছু এলাকার। এসব এলাকার বাঁধের বাইরের শতাধিক বাড়ি-ঘরও তলিয়েছে। মহা দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলার পাথরঘাটা ও বেতাগী ও বামনা এই তিন পয়েন্ট বিশখালী নদীর জোয়ারের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ২৯ কিলোমিটার জুড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর-আম্পানে যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ২৯ কিলোমিটার নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ১৫ স্থানে ৬.৩২০ কিলোমিটার, আমতলীর ৫.২২০ কিলোমিটার, তালতলীর ১.৯৫০ কিলোমিটার, পাথরঘাটার ৮.৫৫ কিলোমিটার ও বামনার ৬.৫১৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে।

জেলার মোট ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৫০০ কিলোমিটারের উচ্চতা ১৩ ফুট বা তার কম। বাকি ৩০৫ কিলোমিটারের উচ্চতা ১৩-১৬ ফুট।

অতি জোয়ারে নদ-নদীর পানির উচ্চতা ১২ ফুট বাড়লে ৫০০ কিলোমিটার বাঁধের অধিকাংশই উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে। বাকি ৩০০ কিলোমিটার মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, জেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতারও বেড়িবাঁধ আছে। সিডর, আইলা আ আম্পানে যেসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাও পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। এজন্য বরগুনার মানুষ জলোচ্ছ্বাসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাঁধের কারণে প্রাণহানিও হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বরগুনায় যুগোপযোগী বাঁধ অত্যাবশ্যক। এটা এখন জেলার মানুষের প্রাণের দাবি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, ‘জেলার ৬৫ স্থানের প্রায় ২৯ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৫-১৮ ফুটের বেশি পানি বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের বাঁধগুলোর উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৬ ফুট। যে কারণে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার ২১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এসব বাঁধ সংস্কার হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের উচ্চতা কমে গেছে। ফেলে উচ্চ জোয়ারে বাঁধ তলিয়ে লোকালয় পানি ঢোকে।

‘উপকূলের বাসিন্দাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো দরকার। আমরা এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি। ১০০ কিলোমিটার বাঁধ পুননির্মাণ ও নদী শাসনের জন্য কয়েকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রকল্প পাস হলে আমরা অর্থ বরাদ্দ পাব।’

এ বিভাগের আরো খবর