নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়া এসকেএল-৩ লাইটারেজ জাহাজটিকে জিম্মায় পেয়েছে মালিকপক্ষ।
জামিন পেয়েছেন জাহাজের মাস্টারসহ ১৪ জন কর্মচারীও। তবে মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার আগে জাহাজটি দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, আদালত সোমবার এসকেএল-৩ জাহাজটি ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বন্ডে জাহাজের মালিকের জিম্মায় দেয়ার আদেশ দিয়েছে। এর আগে আদালত বৃহস্পতিবার ১৪ আসামিকে জামিন দেয়।
এ আদেশ মেনে নৌপুলিশের নারায়ণগঞ্জ সদর থানার কর্মকর্তারা জাহাজটি বুঝিয়ে দিয়েছেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধির কাছে। পরে জাহাজটি নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে চলে যায়।
নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, আদেশ মেনে জাহাজের মালিকের প্রতিনিধি প্রকাশ বাবুর কাছে জাহাজটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এসকেএল-৩ জাহাজের মালিক বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়।
ওসি আরও জানান, মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশ মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর নৌথানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুছ মুন্সি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজে উপস্থিত থেকে এমভি এসকেএল-৩ জাহাজটি বুঝিয়ে দিয়েছি। এই জাহাজের ধাক্কায় শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চ ডুবে ৩৪ জন নিহত হয়।
‘এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামি জামিন পেয়েছেন তবে মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছি। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রমাণ মিলবে, তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হবে।’
মামলার বাদী বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ট্রাফিক বিভাগ) বাবু লাল বৈদ্যেও বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে জাহাজটি মালিকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। তবে মামলা চলমান রয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। কারণ যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি পাওয়া প্রয়োজন।’
যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দেয়া জাহাজটি মালিকের জিম্মায় দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী মাহবুবুর রহমান মাসুম। তিনি বলেন, ‘বিচার শেষ হওয়ার আগেই জাহাজটি মালিকের জিম্মায় নিয়ে গেল। আসামিরা জামিন পেয়ে গেল। এতে করে শেষ পর্যন্ত ঘটনার সঠিক সুরাহা হয় না।’
গত ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে লঞ্চটি শীতলক্ষ্যা নদীর সদর উপজেলার কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে এসকেএল-৩ লাইটারেজ জাহাজ লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়।
পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনীর ডুবুরি দল ও নৌপুলিশের সদস্যরা। পরে জানা যায়, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় এসকেএল-৩ লাইটারেজ জাহাজটির মালিক।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, নৌ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনেও জাহাজের সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কথা উঠে আসে।
৮ এপ্রিল দুপুরে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় মেঘনা নদী থেকে এসকেএল-৩ লাইটারেজ জাহাজসহ ১৪ জন কর্মচারীকে আটক করেন কোস্টগার্ডের সদস্যরা।