পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ফরিদপুরের দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার বিদ্যুৎ পেয়ে উচ্ছ্বসিত চরাঞ্চলের মানুষ। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সংযোগের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের।
ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ফরিদপুর সদর, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে ১০ হাজার পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে কাজ চলছে। মোট ১০টি ইউনিয়নের ৮৮টি গ্রামকে আলোকিত করতে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের কাজ করছে জেলার এই প্রতিষ্ঠানটি।
ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আবুল হাসান বলেন, ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণকাজের ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়েছে পদ্মার ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রির চরের ২০১টি পরিবার, একটি বাণিজ্যিক ও তিনটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে।
এ ছাড়া সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার চরাঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ-সুবিধা। ১১ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল লাইনের মাধ্যমে মোট দুই পরিবারের মাঝে সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির জানান, ‘এই ডিজিটাল যুগেও অন্ধকারে ছিল আমার এলাকার চরাঞ্চলের মানুষ। সম্প্রতি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইন টেনে প্রথম পর্যায়ে ২০১টি পরিবারকে লাইন দেওয়া হয়েছে। অন্যদের দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রামের মানুষ সরকারের প্রতি অনেক খুশি। এখন তাদের জীবন মানের পরিবর্তন ঘটছে।’
ডিক্রিরচরের নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ পেয়ে খুশি আব্দুর রাজ্জাক। পরিবারে তার তিন সন্তান। তিনি বলেন, ‘কখনও ভাবি নাই পদ্মার এই চরে বিদ্যুৎ আসবে। আর সেই বিদ্যুৎ দিয়ে বাড়িতে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্যান চলবে।’
তিনি জানান, তার সন্তানেরা এখন বিদ্যুতের আলোয় পড়ালেখা করতে পারছে। এতকাল হারিকেনের আলোয় পড়ত।
এই এলাকায় আরও অনেকের পরিবারে এখন খুশির বন্যা। কৃষক ভাবেনি বিদ্যুৎ দিয়ে সেচের ব্যবস্থা হবে।
ফরিদপুর ‘নাগরিক মঞ্চ’-এর সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, ‘সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন দুর্গম চরের মানুষ ভাবতে পারেনি বৈদ্যুতিক সুবিধার কথা। সরকারের এই উদ্যোগ এলাকার মানুষজনের কাছে স্বপ্নের মতো। তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।’
ফরিদপুর সনাকের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী জানান, বিদ্যুতের ছোঁয়ায় তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। পাশাপাশি চরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জীবন মানের পরিবর্তন আসবে, যা ফরিদপুরের সামগ্রিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের মানুষের জন্য সরকার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনচিত্র। এখন অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে চরাঞ্চলে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ৪৩৭ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন হলে বিদ্যুতের সুবিধা পাবে ১০ হাজার পরিবার।