৩৩৩ নম্বরে খাবার চেয়ে ফোন করে নারায়ণগঞ্জে তোলপাড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই একই রকম আরও একটি ঘটনার সাক্ষী হলো চট্টগ্রাম।
তবে খানিকটা অমিলও আছে। নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন করেন বিপাকে পড়ে। তবে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক তরুণ ফোন করেন কৌতুহল মেটাতে।
অবশ্য নারায়ণগঞ্জের ফরিদ আহমেদের জন্য ত্রাণ নিয়ে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা যে ঘটনা ঘটান, তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি হাটহাজারীতে। অকারণে ফোন করায় সেই তরুণকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
প্রয়োজন না থাকলেও সোমবার দুপুরের দিকে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করেন সেই তরুণ। নিজের নাম বলেন সাকিব। ঠিকানা দেন উপজেলার উত্তর মার্দাশা এলাকার পশ্চিম বাড়িয়াঘোনা। এলাকায় পৌঁছতে হলে পেরুতে হয় নদী।
ফোন পেয়ে ত্রাণ নিয়ে ছুটলেন ইউএনও রুহুল আমিন। সঙ্গে নিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে।
উপজেলা সদর থেকে গাড়িতে যান নদী পর্যন্ত, নদী পার হন ডিঙি নৌকায়। সেখান থেকে অটোরিকশায় করে যান সেই বাড়িতে।
কিন্তু গিয়ে দেখেন তিন তলা বাড়ি সেটি। নিচতলায় থাকেন সাকিবরা। অন্য দুই তলায় থাকেন তার দুই চাচা।
ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পর ইউএনও দেখতে পান ৩৩৩-এ কল করা তরুণ থাকে তিনতলা বাড়িতে
ইউএনও জানান, সাকিব তাকে বলেছেন, তাদের আসলে ত্রাণের প্রয়োজন নেই, বরং তারাই এলাকার মানুষকে ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করেন। ৩৩৩ নম্বরে কল করে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি আদৌ সত্য কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতেই এই কাজ করেন তিনি।
সেই তরুণের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চাইল ইউএনও বলেন, ‘সেই তরুণ তার ভুল স্বীকার করে এই ঘটনায় অনুতপ্ত হয়েছেন। এরপর ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ আর করতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।
তবে এই ঘটনায় সেই তরুণকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউএনও জানান, গত এক মাসে ৩৩৩ তে কল পেয়ে অন্তত ৭০ টি পরিবারকে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এই হটলাইন নম্বরটি স্বাস্থ্যসেবার জন্য চালু করা হলেও করোনাকালে খাদ্য সংকটে ভোগা মানুষদেরকে এই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে।
তবে যারা ফোন করেন, তাদের সবাইকেই ত্রাণ দেয়া হয় না। ফোন করলে স্থানীয় পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়।
বরিশালে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে এক নারীর ভাঙা ঘর দেখে তাকে বিনামূল্যে ঘর দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
তবে ৩৩৩ নম্বরে খাদ্য চেয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে।
গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার দেওভোগ এলাকার ফরিদ আহমেদ খাবার চেয়ে ফোন করার পর সরকারি কর্মকর্তারা দেখেন তিনি চার তলা একটি বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তারা জানতে পারেন, তার গেঞ্জি কারখানা আছে।
এরপর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে ১০০ জনকে ত্রাণ বিতরণ করতে বলেন।
সে সময় ফরিদ আহমেদের করুণ কাহিনি জানা যায়নি।
শনিবার তিনি ত্রাণ বিতরণ করার পর জানা যায়, সেই বাড়ির পুরোটার মালিক তিনি নন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তার হিস্যা কমই। আবার গেঞ্জি কারখানা থাকলেও সেটি গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পরেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এরপরেও কারাগারে যাওয়ার ভয়ে স্ত্রীর অলঙ্কার বন্ধক রেখে তিনি ত্রাণ বিতরণ করেন। আর এই বিষয়টি জানাজানি হলে প্রশাসন তার টাকা ফেরত দেয়। পুরো ঘটনাটি তদন্তে গঠন করা হয়েছে কমিটি।