বদলি করার ক্ষোভ থেকে নিজ কর্মস্থল টেক্সটাইল সিটির (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লি.) অফিস কক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা চুরি করেন কারখানাটির সহকারী সিকিউরিটি ইনচার্জ মোফাজ্জল হোসেন ওরফে জুয়েল।
এ কাজে তিনি সহযোগী হিসেবে নেন হানিফ ও সেলিম নামে দুজনকে। এরপরও কর্মস্থলেই চাকরি করছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। থানা পুলিশের তদন্তে ধরা না পড়লেও পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগশেনের তদন্তে জুয়েল ধরা পড়েছেন সদলবলে।
চুরির ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে তারা এখন কারাগারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক পঙ্কজ কুমার আচার্য সোমবার এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের ডিসম্বের মাসে ময়মনসিংহের ত্রিশালে টেক্সটাইল সিটির (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ) ৫নং ভবনের দ্বিতীয় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা চুরি হয়। দীর্ঘ তদন্তের এক পর্যায়ে ২৩ মে রোববার ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলেন- মোফাজ্জল হোসেন ওরফে জুয়েল মিয়া (৩৭), মো. হানিফ (২৯) ও সেলিম হোসেন (৩৩)।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে টেক্সটাইল সিটি (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ) থেকে অজ্ঞাতপরিচয় চোরের দল ৯ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গার্মেন্টেসের সিকিউরিটি ইনচার্জ বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় অজ্ঞাতনামা চোরদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি ত্রিশাল থানা পুলিশ ৭ মাস তদন্ত করে কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ময়মনসিংহ পিবিআইকে।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসের সার্বিক সহযোগিতায় এসআই পংকজ কুমার আচার্য মামলাটি তদন্ত করেন।
পিবিআই জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে জুয়েল ছিলেন ত্রিশালের গার্মেন্টেসের সহকারী সিকিউরিটি ইনচার্জ। সেখান থেকে তাকে ভালুকায় কনজ্যুমার নিটিং গার্মেন্টেস বদলি করা হলে তার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
কারণ তিনি ও তার স্ত্রী একই সঙ্গে গার্মেন্টসটিতে চাকরি করতেন। ভাড়া থাকতেন টেক্সটাইলের কাছেই বাগান এলাকায়।
বদলির ক্ষোভে স্থানীয় সেলিম, হানিফ, আজিজের সঙ্গে মিলিত হয়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে চুরির পরিকল্পনা করেন জুয়েল।
সন্দেহভাজন আসামি সেলিম টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। অপর দুই আসামি হানিফ ও আজিজ টেক্সটাইলের কাছে বাগান এলাকায় বসবাস করতেন। হানিফ বালুর ট্রাকের হেলপার আর আজিজ ডিশের লাইনম্যান।
পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী গত ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে হানিফ ও জুয়েল মিয়া কালো বোরকা পড়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসের দক্ষিণ পাশের প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকেন। হানিফের কাছে ২৫ ইঞ্চি লম্বা শাবল ছিল।
সিকিউরিটি গার্ড সেলিম ঘটনার আগেই দ্বিতীয় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষে ঢোকার ফায়ার এক্সিট দরজার চাবি জুয়েলকে দেন। টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসের দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাইরে পাহারায় থাকেন সেলিম ও আজিজ। হানিফ ও জুয়েল কৌশলে টেক্সটাইল সিটির ৫নং বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষের কাছে পৌছে পূর্বেই সংগৃহীত চাবি দিয়ে ফায়ার এক্সিট দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢোকেন। এরপর হানিফের কাছে থাকা শাবল দিয়ে লকার ভেঙে ভেতরে থাকা বেতন-ভাতার টাকার বাক্সটি নিয়ে চলে আসেন।
পরবর্তীতে তারা চারজন বাক্সে থাকা প্রায় ১০ লাখ টাকা ভাগ করে নেয়।
ময়মনসিংহ জেলা পিবিআইর এসপি গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এটি একটি গার্মেন্টেসে চুরির চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই ময়মনসিংহ জেলাকে দেয়া হয়। পিবিআই মামলার প্রকৃত আসামিদের সনাক্তের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম নেয়।
‘এর অংশ হিসেবে জব্দকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বারবার পরীক্ষা করা হয়। ফুটেজ পরীক্ষায় বোরকা পড়া একজন পুরুষের মেয়েলী ভঙ্গিতে হাঁটার দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টসে কর্মরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন আসামি জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
পিবিআইর এসপি গৌতম কুমার বলেন, সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে চুরির কথা স্বীকার করেন। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন অপর দুই আসামি হানিফ ও সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার তিনজনকে সোমবার আদালতে হাজির করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।