ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। আঘাত হানতে পারে দু-এক দিনের মধ্যেই। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ক্ষেতের কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন চলনবিলের পাশের তিন জেলা পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরের আট উপজেলার কৃষকরা। তবে ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই দুর্যোগের আগে ধান কাটার কাজ শুরু করতে পারছেন না পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে।কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায়; নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলায় এবং সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আট উপজেলার ১ দশমিক ১ লাখ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো আবাদ করা হয়েছে। জমির ৬০ ভাগ ধান ইতিমধ্যে কাটার উপযোগী হয়েছে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচরা গ্রামের কৃষক কাজেম প্রামাণিক গত বছর দুই বিঘা জমির পাকা ধান কাটার আগেই আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এরপর শুরু হয় বন্যা। তলিয়ে যায় তার সব ধান। আশায় বুক বেঁধে এই কৃষক এ বছরও ধানের আবাদ করেছেন।
আসন্ন দুর্যোগের আশঙ্কায় কাজেম প্রামাণিক তার জমির আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। কারণ ঘূর্ণিঝড় ব্যাপকভাবে আঘাত হানলে জমির প্রায় পুরো ধান মাটিতে নুইয়ে পড়বে। একই সঙ্গে যদি বন্যা হয়, তা হলে একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারবেন না তিনি।তার মতো একই অবস্থা চলনবিলের বেশির ভাগ কৃষকের।
একই গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ‘সাড়ে তিন বিঘা জমির মধ্যে দুই বিঘার ধান কাটা এখনও বাকি। শ্রমিক না পেয়ে ধান কাটতে পারছি না।’ধান কাটতে না পেরে চিন্তিত মজিবর আরও বলেন, ‘এ বছর বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। কিন্তু ঝড়ের আগে ধান ঘরে না তুলতে পারলে কিছুই পাব না।’কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান কাটার ভরা মৌসুমে প্রতিবছরই শ্রমিকসংকটে পড়েন উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত চলনবিল এলাকার কৃষকেরা।ফরিদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, উপজেলার মাত্র ৪৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।চাটমোহর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ধান ইতিমধ্যে কাটার উপযোগী হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকেই সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। আসন্ন দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে কৃষকদের পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।’শ্রমিকসংকটের কারণে চলনবিলের বেশির ভাগ এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
নিমাইচরা গ্রামের রোজি বেগম বলেন, ‘পুরুষরা মাঠ থেকে ধান কেটে আনে আর আমরা ধান মাড়াই, ধান ঝাড়া, শুকানো ও ব্যাগে ভরার কাজ করি। চলনবিলের প্রায় প্রতিটি এলাকায় নারীরা এভাবেই ধান কাটার ভরা মৌসুমে কাজ করে।’চলনবিলের বিশাল এলাকাজুড়ে দুর্যোগের আগে ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকরা মরিয়া হয়ে কাজ করলেও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে কতটা ফসল রক্ষা করতে পারবেন, তা নিয়ে তারা উদ্বেগে রয়েছেন।