শহর থেকে খুব একটা দূরে নয়। গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটাতে প্রায়ই আসে কিশোর-তরুণরা।
তবে তাদের বহুজনের আচরণই পছন্দ না এলাকাবাসীর। বিশেষ করে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় আছে বিরক্তি।
ভোঁ করে তীব্র গতিতে মোটরসাইকেল শহুরে উঠতি বয়সীদের আনন্দ দেয় বটে, তবে গ্রামের মানুষের জন্য এটি তৈরি করছে ভীতি।
মাঝেমধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে যারা প্রতিবাদ করেছেন, তারা উল্টো মারধরের শিকার হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ২নং লতিবাবাদ ইউনিয়নের ঘটনা এগুলো। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় গ্রামে আনাগোনা শহরের ছেলেদের।
স্থানীয়রা জানান, তরুণরা এসে দিনভর আড্ডা দেয় কাটাবাড়িয়া এবং মুকসেদপুর গ্রামে। এতদিন চুপ করে থাকলেও গ্রামবাসী এবার সোচ্চার হয়েছেন। দুই গ্রামের লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে করেছেন উঠান বৈঠক। আর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রতিরোধের।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুয়েল ফারুকী নিয়েছেন এই উদ্যোগ। আর তার এই উদ্যোগেই সাড়া দিয়েছেন দুই গ্রামের গণ্যমান্যরা।
সুয়েল ফারুকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাঁন রাইতে (ঈদের আগের রাত) একদল যু্বক গ্রামের ভিতরে এসে আতশবাজি ফুটাতে থাকে। শব্দে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি তারা রাস্তায় নাচানাচিও করতেছে। আমার বাড়িতে দুইজন মুরব্বি অসুস্থ। আবার শহর থেকে ফেরার পথে আমার এক আত্মীয় মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। এই অবস্থায় আমি তাদের আতশবাজি ফুটাতে নিষেধ করলে তারা আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়।
‘পরে আমার বাড়ির লোকজন তাদের এসে বোঝানোর চেষ্টা করলে বখাটেরা তাদের প্রতিও ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে আসে এবং শহরে গেলে হাত-পা কেটে দেবে বলে হুমকি দিতে থাকে।’
একপর্যায়ে গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া দেন।
এই ঘটনার জেরে গত ১৬ মে রাত ৮টার দিকে সুয়েলের চাচা আব্দুল আউয়াল শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে আটকে বেধড়ক পেটায় সেই যুবকরা।
১৭ মে আউয়ালের চাচাতো ভাই স্বপন ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলা করার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর পর থেকে তার সহযোগীদের হুমকিধমকি আরও বেড়েছে বলে জানান সুয়েল।
তিনি বলেন, ‘তাই বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে আলোচনা করেছি। গ্রামবাসীও সোচ্চার হয়ে ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। এখন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
কাটাবাড়ীয়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘ইউনিয়নে বড়পুকুর নামে একটা জায়গা আছে। এই পুকুরের আশেপাশের লোকজনসহ মেয়েছেলেরাও সেখানে গোসল করে। কিন্তু এলাকার কিছু খারাপ ছেলের সাথে চলাফেরা করার সুবাদে শহর থেকেও খারাপ ছেলেরা এসে পুকুরপাড়ে বসে নেশা করে।
‘আবার এলাকার মেয়েরা পুকুরে গোসলে নামলে এই ছেলেরাও সেখানে নেমে সাঁতরায়। যার ফলে এলাকার মেয়েরা এখন আর পুকুরে গোসল করতে যেতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বখাটেরা বেশির ভাগই সদর উপজেলার। আমাদের বাড়ি ইউনিয়নে। ঘুম থেকে উঠেই যেতে হয় তাদের এলাকায়। পড়তে হয় তাদের চোখের সামনে। আর তখন যদি আমাদের মারধর করে এই ভয়েই আমরা চুপ থাকি, মার খেয়েও নীরবে সহ্য করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সহ্য করি বলেই তারাও সুযোগ পায়। কিন্তু গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ফলে বখাটেরা এখন আর এই সুযোগ পাবে না।’
৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেরা শহর থেকে এসে গ্রামের ভেতরে ঢুকে অযথা খারাপ ব্যবহার করে। তাদের প্রতি গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
‘গ্রামে নিজেদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও এই ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’
আলোচনায় সিদ্ধান্ত কী হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দুই গ্রামের ভেতরে ঢুকে যদি কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে, তবে তাদের আটকে রেখে তাদের অভিভাবককে খবর দেয়া হবে। অভিভাবক যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তাদের পুলিশে দেয়া হবে।’
লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে বেশির ভাগ লোকই তা নীরবে সহ্য করে। যদি নীরবে সহ্য না করে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।’
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আব্দুল আউয়ালকে মারধরের ঘটনায় ওনার ভাতিজা মামলা করার পর ১৭ মে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’