বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ইয়াস’: ভঙ্গুর বেড়িবাঁধে আতঙ্কে উপকূলবাসী

  •    
  • ২৪ মে, ২০২১ ১৮:২৬

বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হওয়ার খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে ২৫ থেকে ২৭ মে দেশের উপকূলসহ ৩০টি জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ রয়েছে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার। ষাটের দশকে নির্মিত এসব বেড়িবাঁধ ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৯টি পয়েন্ট ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে জোয়ারের পানি। আম্পানের পরে এগুলো সংস্কার হলেও এখনও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ১৯টি পয়েন্ট।শ্যামনগর উপজেলার সুভদ্রাকাটি গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতের একমাত্র পথ বেড়িবাঁধ। যা ভাঙতে ভাঙতে এক হাতের মধ্যে চলে এসেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আসলি আমাদের বিপদের শেষ থাকে না। না পারি কোথাও যেতে। আবার আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় উঠতি পারি না সেখানে।‘সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী জানান, জেলার উপকূলীয় এলাকার সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠীকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে হয়। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ থাকতে পারেন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৪৫টি। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার মানুষকে ঠাঁই দেয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন এ রকম সংকট থাকলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।‘

বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হওয়ার খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে ২৫ থেকে ২৭ মে দেশের উপকূলসহ ৩০টি জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তবে ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট রয়েছে। ৪০ হাজার মানুষের জন্য নূন্যতম ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে মাত্র দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ মোকাবিলায় যা একেবারে নগণ্য।’

এদিকে জেলায় সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার বেলা আড়াইটায় ইয়াস-এর অবস্থান। ছবি: উইন্ডিডটকম

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, সাতক্ষীরায় দুপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৬.৫ সেন্টিগ্রেড। বাতাসের আর্দ্রতা রয়েছে ৫২ শতাংশ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এমন ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৫টি। আশ্রয়কেন্দ্রে সবাইকে জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, জেলায় ১৮৩ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এটি দিয়ে দুর্যোগের সময় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে। এ ছাড়া সহায়তা হিসেবে এসেছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া এলাকায় ৭৪ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া জাইকার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকার কাজও চলছে।’

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের জমা করা ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে পাস হলে বেড়িবাঁধ সংকট অনেকাংশে সমাধান হবে।’

পিরোজপুরে প্রস্তুত ৫৫৭ আশ্রয়কেন্দ্র

উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৫৭ আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ২৩৫টি এবং বাকি ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘হতাহতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় রাখতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে প্রতিটি ইউনিয়নে তাৎক্ষণিক আর্থিক সাহায্য দেয়ার জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘গোখাদ্য ও শিশুখাদ্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সতর্কবার্তা জারির কার্যক্রমও চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠনেরও প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে রোববার মঠবাড়িয়া উপজেলায় আধুনিক সুবিধাসহ তিনটি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, হোগলপাতি নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নে খায়েরঘটিচোরা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

ভোলায় প্রস্তুত ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবকঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় ভোলায় মাঠে কাজ করবে ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ।

রোববার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ইলাহী চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি স্পট ঠিক করা হয়েছে, যেখান থেকে ৩ লাখ ১৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় মোট ৭৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্যালাইন, ওষুধসহ অন্যান্য ব্যবস্থা। জেলায় একটি ও সব উপজেলায় একটি করে ৭টি কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। এখান থেকে ঝড়ের সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে।দুর্যোগকে কেন্দ্র করে কেউ যদি গুজব ছড়ায়, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

করোনা ঠেকাতে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে ধারণক্ষমতার অর্ধেক

ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আশ্রয়কেন্দ্রের সক্ষমতার অর্ধেক মানুষকে একটি কেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘৯ উপজেলায় ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে পাঁচ লাখ লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রয়েছেন ৫ হাজার ৩২০ জন স্বেচ্ছাসেবক।

ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছার মানুষ। এর আগে আইলা, সিডর, ফণী, বুলবুল ও আম্পানে এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রামে প্রস্তুত ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ৫০০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী মজুত রয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, ‘ইয়াস নামের ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ বা ২৬ মে আঘাত হানতে পারে। এ জন্য ১ নম্বর দূরবর্তী বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় গো-খাদ্য কেনার জন্যে প্রতি উপজেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাসহ মাইকিং করা হচ্ছে।

জোয়ারের পানি বাড়ছে পায়রা নদীতে

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী।

তি‌নি বলেন, ‘পায়রা নদীর বিপৎসীমা ২ দশ‌মিক ৮১ ‌সে‌ন্টি‌মিটার। কিন্তু রোববার রাত থে‌কে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পায়রা নদীর জোয়া‌রের উচ্চতা ছিল ২ দশ‌মিক শূন‌্য ৮‌ সেন্টি‌মিটার। অর্থাৎ জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৭৩ ‌সে‌ন্টি‌মিটার নিচ দি‌য়ে প্রবা‌হিত হচ্ছে।

জোয়ারের চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

প্রকৌশলী হা‌লিম সা‌হেলী জানান, জেলায় মোট বে‌ড়িবাঁধ র‌য়ে‌ছে ১ হাজার ৩৪১ কিলো‌মিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৬ ‌কি‌লো‌মিটার। সম্ভাব‌্য ঝুঁকিতে রয়েছে ৬২ কি‌লো‌মিটার বেড়িবাঁধ, যেগু‌লোর সংস্কারকাজ চলছে।

ঘূর্ণিঝড় ৩৯১‌টি সাই‌ক্লোন শেল্টারসহ ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, পটুয়াখালী সদ‌রে ১৯টি, দুমকিতে ৪৩, মির্জাগ‌ঞ্জে ২৭, বাউফ‌লে ১৩৫, দশ‌মিনায় ৫৭, গলা‌চিপায় ১০৭, কলাপাড়ায় ১৬০ এবং রাঙ্গাবালী‌তে ৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হ‌য়ে‌ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইয়াস মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হচ্ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি। ছবি: নিউজবাংলা

জেলা আবহাওয়া অ‌ফি‌সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পটুয়াখালী‌তে বাতা‌সের আর্দ্রতা ছিল ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া তাপমাত্রা ৩৫ দশ‌মিক ৭ ‌ডি‌গ্রি সেল‌সিয়াস। বাতা‌সের গ‌তি‌বেগ ছিল ঘণ্টায় ৪ কি‌লো‌মিটার।

জেলা সি‌ভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকা‌বিলায় পটুয়াখালী‌তে মোট ৯৩‌টি মে‌ডি‌ক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হ‌য়ে‌ছে। এ ছাড়া প্রতি‌ উপ‌জেলায় প্রয়োজনীয় খাওয়ার স‌্যালাইন, পা‌নি বিশুদ্ধকরণ ট‌্যাব‌লেটসহ অন‌্যান‌্য ওষুধ মজুত রাখা আ‌ছে।

পটুয়াখালী নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. ম‌হি উ‌দ্দিন খান জানান, জেলার অভ‌্যন্তরীণ রু‌টে ৬৫ ফু‌টের নিচে সব ধর‌নের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হ‌য়ে‌ছে। ঢাকাগামী দোতলা লঞ্চ চলবে। সে‌ ক্ষে‌ত্রে পরে নি‌র্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব‌্যবস্থা নেয়া হ‌বে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রন‌জিৎ কুমার সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষ‌তি থে‌কে ক্ষ‌তিগ্রস্তদের তাৎক্ষ‌ণিক সহ‌যো‌গিতার জন্য ২ ‌কো‌টি ৩০ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

‘ইয়াস’ আতঙ্কে সুন্দরবনের উপকূলবাসী

সিডর, আইলা, আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার জেলে ও বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক এখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার ভারতের উড়িষ্যার উপকূল ও বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের পাশের উপজেলা শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।

বাগেরহাট ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খাদিজা আক্তার বলেন, ‘জেলার ৭৫টি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা ও তিনটি পৌরসভায় ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় শিশুখাদ্যের জন্য এক লাখ ও গোখাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৬টি মেডিক্যাল টিম।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-আতঙ্কে রয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন রায়েন্দা ও সাউথখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবছরই মোগো এইহানে ঝড় আয়। মোরা নদীর ধারে থাহি। ঝড় আইলে সাইক্লোন সেন্টারে যাই। এর আগে যে ঝড়-তুফান আইছে, হ্যাতে মোগো গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ব্যাবাগ কিছু ভাসাইয়া লইয়া গেছে।’

শরণখোলার রাজেসর গ্রামের বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, ‘সিডরে মোগো বাড়িঘর সবকিছু গেছে। এহন মোরা এই বলেশ্বর নদীর পাড়ে ঘর বানাইয়া থাকি। নতুন কইরা নাহি আবার ঝড় আইতাছে। এই ঝড়ে যদি মোগো ঘর-দুয়ার আবার ভাসাইয়া লইয়া যায়, মোরা কই গিয়া থাকমু।’

শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ‘রোববার রাতে বৃষ্টি ছাড়া এখন পর্যন্ত ঝড়ের তেমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। উপজেলার প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ঝড়ের আলামত দেখা দিলেই প্রথমে সুন্দরবন উপকূলের জেলে ও বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে।’বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বরিশাল বিভাগের ৪ হাজার ৯১৫ আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আশ্রয় নিতে পারবেন বিভাগের ২০ লাখ মানুষ।

দুর্যোগ মোকাবিলায় সোমবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশালে ১০৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫, ভোলায় ১১০৪, পিরোজপুরে ৭১২, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলো থেকে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ গবাদিপশুকেও স্থান দেয়া যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর