করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে দীর্ঘ ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পরপর শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচল। দেশের বিভিন্ন জেলার ঘাটগুলোতে নৌযান চলা শুরু হলেও যাত্রীসংখ্যা কম।
বরিশাল
বরিশালে সোমবার ভোর ৫টা থেকে লঞ্চ চলা শুরু হয়েছে। রাতে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাব দ্বিতল লঞ্চগুলো। ভাড়া না বাড়লেও সকাল থেকে যাত্রীসংখ্যা কম। কোনো কোনো লঞ্চে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না হওয়ায় তারা যাত্রাবিরতি দিয়েছে।
যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রী কম হওয়ায় আমরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে পারছি। এ ছাড়া লঞ্চে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজারও দিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।’
এমভি রাতুলের মাস্টার সাইফুল ইসলাম জানান, মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীকে লঞ্চে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করিয়ে ওঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌরুটে ভাড়াও বাড়ানো হয়নি। নেয়া হচ্ছে অর্ধেক যাত্রী।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সব দিকেই নজর রাখছি।’
মুন্সিগঞ্জ
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে কমেছে যাত্রীর চাপ।
ঈদের আগে ও ঈদের সময়ে প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় থাকলেও সোমবারের চিত্র ভিন্ন। ফেরিতে যাত্রী নেই বললেই চলে। সবাই লঞ্চে করে নদী পার হচ্ছেন।
লঞ্চ চলা শুরু হওয়ায় যাত্রীর চাপ কমেছে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে। ছবি: নিউজবাংলা
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, সকাল থেকে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তবে ফেরিতে যাত্রীর চাপ নেই। শুধু যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরিগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় যাত্রীরা লঞ্চে পারাপার হচ্ছেন।
ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। লঞ্চচালকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অর্ধেক যাত্রী নেয়া হচ্ছে লঞ্চগুলোতে।
মাদারীপুর
মাদারিপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের দিক লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। তবে প্রশাসনের নিষেধ থাকায় বন্ধ রয়েছে স্পিডবোট।
ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীরা লঞ্চে পার হতে শুরু করেছেন। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিলেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০ শতাংশ বেশি।
তবে দীর্ঘদিন পর লঞ্চ চলাচল শুরু করায় স্বস্তি পেয়েছেন যাত্রী, লঞ্চমালিক ও শ্রমিকরা।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের তুলনায় অর্ধেক যাত্রী তোলা হচ্ছে লঞ্চে। ভাড়া জনপ্রতি ৩৫ টাকার পরিবর্তে নিচ্ছেন ৫৫ টাকা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। সোমবার ভোর ৬টায় বাংলাবাজার ঘাট থেকে লঞ্চ শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া শুরু করে।’
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, লঞ্চ চলাচল শুরু করায় ফেরিতে যাত্রীর চাপ কমেছে। ফলে যানবাহন পারাপার সহজ হয়েছে।
চাঁদপুর
অন্য জেলাগুলোর তুলনায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে।
চাঁদপুরে লঞ্চঘাট থেকে সোমবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচল। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ৫টি লঞ্চ এবং চাঁদপুর ঘাটে এসে ভিড়েছে ২টি লঞ্চ।
চাঁদপুরে অবৈধভাবে স্পিডবোটে মাঝনদীতে গিয়ে লঞ্চে উঠেছেন অনেক যাত্রী। ছবি: নিউজবাংলা
ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া কয়েকটি লঞ্চে মাঝনদীতে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন চর থেকে আসা যাত্রীরা ট্রলারে গাদাগাদি করে এসে মাঝনদীতে চলন্ত লঞ্চে উঠছেন।
সকাল থেকে লঞ্চঘাটে যাত্রীর ভিড় কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে।
ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কাজ করে যাচ্ছে বন্দর ও নৌপুলিশ কর্তৃপক্ষ।
তবে অধিকাংশ লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও অতিরিক্ত ভাড়া রাখার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে ঘাটে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকভাবেই হচ্ছে। মাঝনদীতে ট্রলার থেকে যাত্রী না তোলার জন্য আমরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করেছি। যারা এভাবে যাত্রী তুলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ও জেলা বন্দর কর্মকর্তা কায়সারুল আলম বলেন, ‘লঞ্চে যেন ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী না নেয়া হয়, সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।’