বরগুনার ভারানি খাল পারের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। দখলদারদের কবল থেকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ খাল উদ্ধারে অভিযান শুরু হওয়া স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল। জেলা প্রশাসন বলছে উচ্ছেদ অভিযান শেষে খাল পাড়ে আর কোনো অবৈধ স্থাপনার অস্তিত্ব থাকবে না। বরগুনা জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি প্রশাসন যৌথভাবে রোববার সকালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে।অভিযানে নেতৃত্ব দেন বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিয়া শারমিন। সকাল নটায় ভাড়ানি খালের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় খালের পারের ৭৩টি পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দুপুর পর্যন্ত ৬৮টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আদালতের কারণে এতদিন ভারানি খালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। এখন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় আর কোন বাধা নেই। তাই আমরা উচ্ছেদ শুরু করেছি। এই অভিযান বন্ধ করার আর কোন সুযোগ নেই।’ ভারানী খাল অবৈধ দখলদার মুক্ত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বেলা, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি, বরগুনা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছে।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট ভারানি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ দেয়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি ভারানি খালপারের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এ আবেদনোর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়।
বরগুনার দেলোয়ার হোসেন ও ইমাম হোসেন নামের দুই ব্যক্তি খাল পারের জায়গা সরকার থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত উল্লেখ করে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের আদেশ সংশোধনের আবেদন করেন।
এ আবেদনে হাইকোর্ট আগের আদেশ সংশোধন করে আদেশ দেয়। এতে খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সংশোধিত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ বছর ২০ এপ্রিল সংশোধিত আদেশ স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আদেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে রোববার খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি জহিরুল হাসান বাদশাহ বলেন, ‘ভারানি খালটি একসময় খরস্রোতা ছিল। এই খাল দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করতো। দখলদারদের কবলে পড়ে খালটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। খালে এখন পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আজ স্বার্থক হয়েছে।’
ভারানি খাল দখলমুক্ত করার অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরগুনার শাখার সভাপতি মুশফিক আরিফ বলেন, ‘খাল দখলমুক্ত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বিভিন্ন মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি। সবশেষ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। শুরু হয়েছে উচ্ছেদ।’
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, ‘দখল হয়ে যাওয়ায় অনেক বছর ধরে এ খালের খননকাজ বন্ধ ছিল। আমরা দ্রুত খনন সম্পন্ন করব, এ জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হলে ভারানি খালের কোনো পাশে আর অবৈধ স্থাপনা থাকবে না বলে জানান জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।